রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে একান্তে ভাবতেই কক্সবাজার যান নাসীরুদ্দীন

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারি। ফাইল ছবি
Highlights
  • ‘আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র।’

কক্সবাজারের সাগরের পাড়ে বসে গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে ভাবতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, ‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ঢাকার বাইরে যাওয়াকে কোনো অপরাধও মনে করছেন না তিনি। তার মতে, এটি বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।

বৃহস্পতিবার দলকে দেওয়া শোকজ নোটিশের জবাবে এসব কথাই লিখেছেন তিনি।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আমার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও আমাকে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি।’

চিঠিতে স্পষ্টভাবে তিনি বলেছেন, ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।’

নাসীরুদ্দীন জানান, ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর কথা অনুযায়ী তার ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি আহ্বায়ক নাহিদ হোসেনকে বলেন। সেইসঙ্গে দলের সদস্য সচিবের সঙ্গেও টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং তখন জানতে পারেন যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দলের তিনজন প্রতিনিধি যাবেন। আর সেখানে তার কোনো কাজও নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’

‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম, তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

তারা কক্সবাজার পৌঁছানোর পর সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায় সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।’

‘এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয় নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোন বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেয়া হয়নি।’

এনসিপির পক্ষ থেকে পাঠানো শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মনে করেন নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র।’

‘তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব প্রদান করছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে।’

গত মঙ্গলবার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নানান আয়োজন করে সরকার। সেদিন জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে বহুল আলোচিত ও আন্দোলনকারীদের প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই বিশেষ দিনে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের অনুপস্থিতি ও ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এনসিপির পাঁচ নেতার কক্সবাজার ভ্রমণের ছবি ও ভিডিও।

এমন প্রেক্ষাপটে দলের পাঁচ সদস্যকে শোকজ নোটিশ বা কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় এনসিপি। সেখানে বলা হয়, ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চলাকালীন সারজিস আলমসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কক্সবাজার সফরে যান, যা পূর্বানুমতি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। এটি রাজনৈতিকভাবে ‘গুরুত্বহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *