রাখাইন সংকট সমাধানে বাংলাদেশের ‘নতুন কৌশলের’ প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। একই সঙ্গে মিয়ানমারে অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গ্র্যান্ডি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দেশটিতে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা পুরো অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে গ্র্যান্ডি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) ও বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প দেশটির মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে।’
বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘বাংলাদেশে কক্সবাজারসহ আশেপাশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বছরের পর বছর আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ,’ বলেন তিনি।
গ্র্যান্ডি আরো বলেন, ‘এই বিপুল জনগোষ্ঠী এখন সহায়তায় নির্ভরশীল। কাজ নেই, ভবিষ্যৎ নেই। পুরোপুরি ত্রাণের ওপর নির্ভর করে চলছে জীবন, যা ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।’
তিনি জানান, শরণার্থীদের অর্ধেকই ১৮ বছরের নিচে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘তরুণ রোহিঙ্গারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বাস্তবে তারা সুযোগ বঞ্চিত। ফলে কেউ কেউ বিপজ্জনক সমুদ্রপথে পাড়ি জমাতে চায়, কেউ হয়তো চরমপন্থি গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ছে।’
গ্র্যান্ডি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাখাইন সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
‘অনেকে বলবে, এই সংকটের সমাধান অসম্ভব—রক্তপাত, বৈষম্য, স্বার্থের সংঘাত এ পথে বড় বাধা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশাভঙ্গ করা চলবে না,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই অচলাবস্থা এখনই ভাঙতে হবে। শান্তি, মানবিক সহায়তা ও রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও জোরদার করতে হবে।’