১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কে. বালাচন্দর পরিচালিত তামিল ছবি ‘অপূর্ব রাগাঙ্গাল’–এর প্রথম দৃশ্যে এক জীর্ণ পোশাকের তরুণ গেট পেরিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। তখন কেউ কল্পনাও করেনি, ওই তরুণই হয়ে উঠবেন ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে বিস্ময়কর তারকা। নাম ছিল শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। আজ তাকে সবাই চেনে রজনীকান্ত নামে। আর এই দিনেই পূর্ণ হলো তার অভিনয় জীবনের ৫০ বছর।
প্রথমদিকে নায়ক নন, বরং খলনায়ক হিসেবেই বড় পর্দায় ধরা দিয়েছিলেন রজনীকান্ত। ‘১৬ ভায়াথিনিলে’, ‘আভারগল’, ‘গায়ত্রী’র মতো ছবিতে ছিলেন ভয়ংকর প্রতিপক্ষ। কিন্তু ১৯৭৭ সালের তেলেগু ছবি ‘চিলাকাম্মা চেপ্পিন্দি’ ও ‘ভুবনা ওরু কেলভি কুরি’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় আসেন। এরপর ১৯৮০-এর ‘বিলা’—অমিতাভ বচ্চনের ‘ডন’-এর তামিল রিমেকে—তার ধূসর চরিত্র এক নতুন তারকাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
আশির দশকে রজনী হয়ে ওঠেন দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার। পরপর হিট ছবি—‘থালাপতি’, ‘আন্নামালাই’, ‘মুথু’, ‘চন্দ্রমুখী’—তাকে পৌঁছে দেয় সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তার শিখরে। হিন্দি ছবিতে পা রাখেন, এমনকি হলিউডে কাজের চেষ্টা করেন। তবু তার চরিত্র কখনোই পুরোপুরি একরৈখিক হয়নি। ২০০৭-এর ‘শিবাজি’, ২০১6 সালের ‘কাবলি’, ২০১৮-এর ‘কালা’ অথবা ২০২৩-এর ‘জেলার’-এ দেখা গেছে ভুল করা, দ্বিধাগ্রস্ত, মানবিক এক নায়কে।
ক্যারিয়ারে কখনোই শুধুমাত্র ‘হিরো’ হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন না রজনীকান্ত। বরং নিজস্ব ঢঙে, সংলাপ বলার ভঙ্গি আর স্বতন্ত্র হাঁটার স্টাইলেই গড়ে তুলেছেন কিংবদন্তি ইমেজ। তার খ্যাতি এমন যে, সিনেমা মুক্তির আগে ভক্তরা হলের সামনে বিশাল পোস্টারে দুধ ঢেলে উৎসব করেন। একসময় এত দুধ ঢালা হতো যে স্থানীয়ভাবে দুধ সংকট দেখা দিত!
রজনীকান্তের খ্যাতির পেছনে নিজেকে সবসময় রহস্যময় করে রাখাও বড় ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করেছে। পণ্যের বিজ্ঞাপন করেন না, সাক্ষাৎকার দেন হাতে গোনা। ১৯৯৫ সালের পর ভক্ত ক্লাবের স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি জন্মদিনে ভক্তদের জমায়েতেও আপত্তি। একবার দুর্ঘটনায় কয়েকজন ভক্ত মারা গেলে প্রতিবছর তিনি জন্মদিন পাহাড়ে কাটাতে শুরু করেন।
৭৪ বছর বয়সেও রজনীকান্তের জনপ্রিয়তা অমলিন। ‘জেলার’ ছাড়িয়ে নতুন ছবি ‘কুলি’ নিয়েও তৈরি হয়েছে তীব্র আগ্রহ। লোকেশ কঙ্গরাজ পরিচালিত এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে রজনীকান্তকে এক প্রাক্তন কুলির ভূমিকায়। চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পান তিনি—বাস কন্ডাক্টর, কুলি থেকে উঠে আসা এই অভিনেতা সম্প্রতি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
পাঁচ দশকের যাত্রা শেষে আজও রজনীকান্ত শুধু এক জন অভিনেতা নন, এক বিস্ময়। পর্দায় যার আবির্ভাব মানেই—আরও একবার চেনা ফর্মুলা ভেঙে নতুন কিছু দেখার প্রতিশ্রুতি।