জ্বালানি উপদেষ্টা মো. ফজলুল কবির খান বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান শুল্ক আলোচনা শুধুমাত্র বাণিজ্য বিষয় নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কের ওপরও মনোযোগ দিয়েছে।
শুক্রবার দ্বিতীয় দফা উচ্চমাত্রার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর, দেশ দুটি আসছে সপ্তাহগুলোতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনা মূলত ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া বাংলাদেশি রপ্তানির ওপর ৩৫ শতাংশ পরস্পর-শুল্ক নিয়ে কেন্দ্রীভূত ছিল।
রোববার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় শুধু শুল্ক নিয়ে চিন্তিত নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র শুধুমাত্র শুল্কের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয়, তারা আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেটাও বিবেচনা করছে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আলোচনা যে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে দিকটা ইঙ্গিত করে।
চলমান আলোচনায় শুল্ক এবং অশুল্ক বিষয়াদি উভয়ই অন্তর্ভুক্ত, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলোতে ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন থাকার শর্তে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেল দেওয়ার দাবি করছে।
ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে এই থ্রেশহোল্ড অর্জন করা কঠিন হবে। কারণ, বাংলাদেশ চীনের আমদানিকৃত কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল।
ফজলুল কবির আলোচনা যে জটিল, তা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি শুধু শুল্কের বিষয় নয়, এটি আমাদের বৈশ্বিক স্তরে অবস্থান নিয়েও আলোচনা।’
তিনি আরো যোগ করেন যে, এই আলোচনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের সঙ্গে সংগতি আনার জন্য একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।
উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া আলোচনা প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।’
যদিও শুল্কের বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি, তবে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট কয়েকটি অর্ডার স্থগিত ও বিলম্বিত করেছে শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, যদি শিগগিরই এটি সমাধান না হয়, তবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তার রপ্তানি ২৫-৩০ শতাংশ হারাতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ফজলুল কবির আরও বলেন, সরকার সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে তিনি গুরুত্ব দেন যে আলোচনা শুধু শুল্ক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য এবং বৈদেশিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের প্রতি অনুকূল হতে পারে।