মিয়ানমারে সত্যিই প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

3 Min Read
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ম্যাপ। গ্রাফিক্স: টাইমস
Highlights
  • এরকম কল্পিত দাবি থাকলেও কোনো পশ্চিমা দেশের সত্যিকারের যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

অ্যান্ড্রু সেলথ: দক্ষিণ এশিয়ার কিছু বিশেষ মহলে এরকম একটি তত্ত্ব ঘুরপাক খাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মিয়ানমারে একটি “প্রক্সি যুদ্ধ”শুরু করতে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘তাতমাদাও’-কে ধ্বংস করা এবং চীনের ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার বন্ধ করাকে এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধরনের তত্ত্ব স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও কিছু ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে প্রচারিত হয়েছে। এদের ভাষ্যমতে—
১. যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের উপপ্রধান— সবাই নাকি বাংলাদেশ সফর করেছেন, এবং শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে এই ‘অপারেশনের’বিস্তারিত চূড়ান্ত করে ফেলেছেন।

২. গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা দিল্লি চলে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে নাকি তাঁকে এই পরিকল্পনায় সায় দিতে হয়। বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটন তার বিরোধীদের সমর্থনের হুমকি দিয়েছিল।

৩. এই পরিকল্পনার মূল স্তম্ভ ছিল বাংলাদেশে “একটি বৃহৎ সরবরাহঘাঁটি” গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে আরাকান আর্মি, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, এমনকি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

৪. প্রধানত লজিস্টিক, রসদ ও কৌশলগত সহায়তার জন্য তিনটি বাংলাদেশ সেনা ডিভিশন নাকি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত ছিল।

৫. এমন দাবিও করা হচ্ছে যে, কক্সবাজারের কাছে নাকি একটি “বিশাল ঘাঁটি”নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখান থেকে তুর্কি ড্রোন উড়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আঘাত হানবে। লক্ষ‌্য—‘তাতমাদাও’র পূর্ণ পরাজয়।

৬. রাখাইন রাজ্যের আকাশসীমায় “বসনিয়া ধরনের নো-ফ্লাই জোন”ঘোষণার কথাও নাকি বিবেচনায় আছে, যাতে মিয়ানমার বিমানবাহিনীর কার্যক্ষমতা ভেঙ্গে পড়ে। এজন্য বঙ্গোপসাগরে একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোতায়েনের কথাও দাবি করা হয়েছে।

৭. মার্কিন নৌবাহিনী নাকি গোপনে “কোস্ট-কিসিং অপারেশন”(উপকূল স্পর্শ করে ফিরে যাওয়া) চালিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দিচ্ছে।

৮. কথিত এক প্রতিবেদনে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের থাইল্যান্ড থেকে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, কয়েক হাজার মার্কিন ও ব্রিটিশ ভাড়াটে যোদ্ধা মিজোরামের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে ঢুকে চিনল্যান্ডে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বারবার অস্বীকারের পরও এরকম খবর রটানো হচ্ছে।

৯. সবচেয়ে বড় দাবিটি হলো—এই পরিকল্পনার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে একটি বা একাধিক ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ তৈরি করে চীনের কৌশলগত করিডর রুদ্ধ করা। বাংলাদেশ সরকারকে রাজি করাতে নাকি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, সফল হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য একটি “মানবিক করিডোর” তৈরি করা হবে।

এইসব গল্প অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ধরনের দাবিগুলো যুক্তিসংগতভাবে বিচার করলে অতি অবাস্তব বলে মনে হয়। কোনো পশ্চিমা দেশের প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে মিয়ানমারে হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। সামরিক বাস্তবতা ও কূটনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিলে এমন পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অসম্ভব।

বিদেশি সহায়তা কেবল কেবল মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ভাড়াটে যোদ্ধারা থাকলেও তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে থাকতে পারে, রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে নয়।

মিয়ানমার বরাবরই ‘গোপন চুক্তি ও রহস্যময় অপারেশন’-এর গল্পের উর্বর ভূমি। তথ্য ঘাটতি, রাজনৈতিক কল্পনা, এবং কিছু সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়াই খবর প্রকাশ—এসব মিলে ভুয়া খবরের চক্র গড়ে উঠেছে।

এই সর্বশেষ তত্ত্বও সম্ভবত সেই ধারারই একটি চরম উদাহরণ।

(দ্য ইন্টারপ্রেটার থেকে অনুবাদ)

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *