মালয়েশিয়া ফেরত ৩ বাংলাদেশি কারাগারে

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
প্রতীকী ছবি

সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার সন্দেহে মালয়েশিয়ায় আটকের পর তিন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাউল রহমান শুক্রবার তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া থেকে আসা ফ্লাইট একে৭১-এর তিন যাত্রী, নাজরুল ইসলাম সোহাগ, মোহাম্মদ রেদওয়ানুল ইসলাম এবং জাহিদ আহমেদকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

শুক্রবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদ পর্যাদার এক কর্মকর্তা বিষয়টি টাইমস অব বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ ও সন্দেহ রয়েছে। মালয়েশিয়াতেও তারা একই সন্দেহে আটক হওয়ায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদেরকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।’

‘মালয়েশিয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা অন্য অভিযুক্তরা দেশে ফিরলে তাদেরকেও আইনের আত্ততায় আনা হবে’-বলেন তিনি।

ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তিদের কেউ কেউ ইসলামিক স্টেট (আইএস) মতাদর্শের ভিত্তিতে উগ্রবাদী বিশ্বাসকে মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন—এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যারা দেশে ফিরবে তাদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দেশ ছাড়ার আগে তারা কোনো মতাদর্শে জড়িত ছিল কি না? কীভাবে দেশ ছাড়ল ? বিস্তারিত সব কিছু জানা হবে।

শুক্রবার মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম জানায়, দেশটির পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজপি) মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর শাখাগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

মালয়েশিয়ার আইজিপি বলেন, ‘অভিযানে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন বাংলাদেশি পুরুষকে আটক করা হয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি, তারা মালয়েশিয়ায় কোনো সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল না, বরং সদস্য নিয়োগ এবং আইএস-এর বিশ্বাস ও মতাদর্শ প্রচারে মনোনিবেশ করছিল।’

‘এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি মূলত মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্য থেকে সদস্য সংগ্রহ করত। তাদের সদস্যদের বাংলাদেশি শ্রমিক, কারখানার কর্মী এবং অন্যান্য পেশা থেকে নিয়োগ করা হতো। প্রতিটি সদস্যকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে বায়াত (শপথ গ্রহণ) করতে হতো।’—যোগ করেন তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান  মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতন ইসমাইলের দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচজনকে মালয়েশিয়ার দণ্ডবিধির ষষ্ঠ অধ্যায় অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এই পাঁচজনকে এরই মধ্যে শাহ আলম ও জোহর বাহরুর সেশন কোর্টে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে ১৫ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ১৬ জনের এই উগ্রবাদী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার জোহর, সেলাঙ্গরসহ বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ জুন থেকে পরিচালিত নিরাপত্তা অভিযানে এই ৩৬ ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *