‘অভিনয় করেই আমার সংসার চলে। তবে আমি জানি, বেঁচে থাকতে আমার মূল্যায়ন করা না হলেও আমার মৃত্যুর পর কিছু মানুষ হলেও আমাকে মনে রাখবে। হয়তো বলবে, আহারে মহিলা তো কত ভালো ছিল, কত সহজ-সরল ছিল, কারো সাতপাঁচে ছিল না, কারো সামনে-পেছনে ছিল না, আহারে মহিলাটার আত্মা শান্তি পাক,’- সাম্প্রতিক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ কথাগুলো বলেছেন অভিনেত্রী মৌ শিখা।
বিভিন্ন নাটকে মা-চাচির চরিত্রে অভিনয় করেন এ শিল্পী। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, গেল আড়াই মাস ধরে তার হাতে কোনো কাজ নেই। আগে যেখানে মাসে ২০ দিন কাজ থাকতো, সেখানে এখন ৫ দিনও কাজ থাকে না। এতে তার জীবনধারণ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
অবস্থা মৌ শিখার স্ট্যাটাসের চেয়ে অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শিল্পীরা। বাবা চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘বাবাদের দল’। সেই গ্রুপের অ্যাডমিন ও অভিনেতা হারুন অর রশিদ টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের গ্রুপে ৩৫ জনের মতো সদস্য আছেন। আগে গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই মাসের বেশিরভাগ সময় কাজ করতেন। এখন হাতেগোনা দু-এক জন ছাড়া কারো হাতে খুব একটা কাজ নেই।’
তিনি তার নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, নাটক প্রতি প্রতিদিন তিনি ৫-৬ হাজার করে সম্মানী নেন। এতে তার মাসে আয় হতো ১ লাখ টাকার ওপরে। সেখানে তার আয় বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এর ফলে সংসার খরচ, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে গেছে।

ষাট বছর ধরে মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় অভিনয় করছেন আবুল হায়াত। বর্ষীয়ান এ অভিনেতা বলেন, ‘সবাই এখন লাইক ও ভিউয়ের পেছনে ছুটছে। যারা নির্মাতা, তারা বলছেন, যারা বয়স্ক শিল্পী বা এ ধরনের চরিত্র করেন, তাদের নিলে পর্দার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। যদিও এগুলো ভুয়া কথা। আমার যে এত বছরের অভিজ্ঞতা, সেটা যদি তারা কাজে না লাগাতে পারে, তাহলে সেটা তাদের দুর্ভাগ্য।’
আরেক অভিনেতা ফজলুর রহমানের মতে, আগের তুলনায় ষাট শতাংশ কাজ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে শিল্পীদের আয়ে। তিনি বলেন, ‘আগের মতো সিঙ্গেল নাটক হচ্ছে না। অনেক টেলিভিশন চ্যানেল সিঙ্গেল নাটক চালাচ্ছে না। তা ছাড়া করোনার পর থেকে গত ৪-৫ বছর ধরে আমি কাজ কমিয়ে দিয়েছি। সে জায়গা থেকেও বলব, আমি আগে যতটুকু কাজ করতাম, তার চেয়ে কম কাজ করছি। কিন্তু কষ্টের বিষয় হচ্ছে, যারা আমাদের তরুণ বা মধ্যবয়সী শিল্পীরা, বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের জন্য এটা কষ্টের। তাদের আয় যদি অর্ধেকের বেশি কমে যায়, তাহলে তাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন। আমি যতদূর জানি, আমাদের যেসব হাউজ আছে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা কর্মী ছাঁটাই করছে।’

বেশ আক্ষেপের সুরে ডলি জহুর বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, এখন তো আর বাবা-মায়ের প্রয়োজন হয় না, আমাদেরকে তো এক্সট্রা শিল্পী মনে করে। বিশেষ করে ইউটিউব নাটকে। মানুষকে ভালো কিছু দেখাতে গেলে, পারিবারিক বন্ধন দেখাতে গেলে অনেকগুলো চরিত্র লাগে। সে চরিত্রগুলো ছাড়া তো পারিবারিক বন্ধনের নাটকগুলো খুব একটা ভালো হয় না। নির্মাতা-প্রযোজক না বুঝে সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’
চরিত্রাভিনেতাদের কাজ কমে যাওয়া বা তাদের ছাড়াই গল্প ভাবা- এর কারণ কী? এমন প্রশ্নে সকল শিল্পীই বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও নাটকে নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ব্যাপারকে দায়ী করছেন।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপুর মতে, ‘মানুষের এখন মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই কষ্ট হচ্ছে, তাই বিনিয়োগ কম হচ্ছে, কাজও কম হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না। এমন পরিস্থিতিতে তো বিনিয়োগকারীরা কীসের ভরসায় বিনিয়োগ করবেন? তা ছাড়া আগে যে ফেসবুক-ইউটিউব থেকে আয় হতো, তা অনেক কমে গেছে। সবমিলিয়ে শিল্পীরা বিপদে পড়েছেন।’