বাবাকে পাকা ঘর তুলে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল শহীদ সাজিদের

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
শহীদ মো. সাজিদ হাওলাদার। ছবি: বাসস

বাবার প্রিয় সন্তান মো. সাজিদ হাওলাদারের ইচ্ছা ছিল তার অন্য ভাইয়েরা না পারলেও তিনি তার বাবাকে একটি পাকা ঘর তুলে দেবেন। বুক ফাঁটা হাহাকার নিয়ে কান্না-জড়ানো কন্ঠে একথা বলছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মো. সাজিদ হাওলাদার (২২)-এর বাবা সুলতান হাওলাদার।

সুলতান হাওলাদার বাসসকে বলেন, দিনের অবসর সময়ে সাজিদ প্রায়ই বলত, ‘বাবা তোমার জন্য আজ অথবা কাল, একদিন না একদিন আমাদের দেশের বাড়িতে আমি একটি পাকা ঘর তুলে দেব।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ সাজিদ ঢাকা সাইনবোর্ড এলাকায় আমার ভাড়া করা দোকান ‘আল মদিনা’ ভাতের হোটেলে আমাকে সহযোগিতা করত। মাঝে মধ্যে সাজিদ অটো চালাত। আমার ৪ সন্তানের মধ্যে সাজিদ ছিল খুব নম্রভদ্র। ‘

সুলতান হাওলাদার জানান, তারা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সুন্দরকাঠি (বলিয়ান পাড়া) এলাকার বাসিন্দা। তার ও স্ত্রী চায়না বেগমের সংসারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় মেয়ে স্বপ্না বেগম, ছোট মেয়ে রত্না বেগম (বিবাহিত)। বড় ছেলে মো. জুয়েল হাওলাদার ও ছোট ছেলে ছিল শহিদ মো: সাজিদ হাওলাদার (২২)।

সুলতান জানান, শহীদ সাজিদের স্ত্রী সীমা আক্তার ও একটি ছোট মেয়ে আছে। নাম স্বর্ণা আক্তর আয়শা। ওর বয়স এখন মাত্র ২৩ মাস।

সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘সাজিদ যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগদান করত তা কখনও কাউকে বলেনি। কিন্তু আমি একটা সময় বুঝতে পারি। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সে শহীদ হলো।’

তিনি জানান, সাজিদ ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) সকালেই খাবার খেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাবার নাম করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যোগদান করেন। দুপুরের দিকে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বুকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ছোড়া গুলি বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

তিনি জানান, অনেক খোঁজাখুজির পর রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শহিদ সাজিদের লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন জানাজা শেষে বরিশালের বাকেরগঞ্জ হাওলাদার বাড়ির (নিজ বাড়ি) পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। কেইস আইডি-৮৯।

ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে শহীদ সাজিদের বাবা বলেন, ‘আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। খুনিদের বিচার দেখে মরতে চাই।’ আল্লাহ যেন কাউকেই আমার মতো সন্তানহারা না করেন।

সুলতান হাওলাদার আরও বলেন, মো: সাজিদ হাওলাদার শহীদ হওয়ার পর বরিশাল জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২ লাখ, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন।

এছাড়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার ২ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সাজিদের বড় চাচা মোতালেব ওরফে মতি হাওলাদার বলেন, সাজিদ এর বাবা আমার মেজ ভাই সুলতান হাওলাদার পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন।

তিনি বলেন, সাজিদও ঢাকায় বড় হয়েছে। তাই গ্রামের মানুষ তাকে খুব বেশি চিনত না। আমরা যতটুকু সাজিদকে দেখেছি বা জেনেছি, সে অত্যন্ত নিরিহ, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে ছিল। বছর পাঁচে আগে সে বিয়ে করে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *