পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেনএনএ)- এর কমান্ডারসহ দুই সদস্য নিহত হয়েছে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,অভিযানে এ পর্যন্ত ৩ টি এসএমজি, ১টি রাইফেলসহ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চলছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে আইএসপিআর।
কেএনএ-র ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় সোমবারই চট্টগ্রাম সদরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার জালালাবাদ কুলগাঁও এলাকা থেকে সুজন বড়ুয়া ওরফে সাইমন (২৯) নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তারা জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত সুজন পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) ক্যাডার। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি থানার সাঁওতাল পাড়ায়, বাবার নাম অশোক বড়ুয়া।
র্যাব সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে উদ্ধার হওয়া কেএনএ-র ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার পলাতক আসামি সুজন।
তবে ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা দাবি করেছেন, তার দলের কর্মী সুজন বড়ুয়া কোন সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত নন।
এক প্রতিবাদ পত্রে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসী রূপে সাজানোর জন্য সামরিক পোশাক পরিয়ে ও হাতে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে ছবি তুলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে বায়েজিদ থানায় হস্তান্তর করেছে।’

পাহাড়ের সূত্রগুলো বলছে, বছর খানেক আগে কেএনএ-কে নিষিদ্ধ করা হলেও এর আগে অন্তত দু’বছর ধরে তারা প্রকাশ্যে ফেসবুকে ও ইউটিউবে সশস্ত্র তৎপরতার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিল।
ইসলামী জঙ্গিগ্রুপগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির পর নিরাপত্তা অভিযানে কেএনএফ পিছু হটে। সীমান্ত পেরিয়ে এর গেরিলা সদস্যদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে ওপারে, মিজোরাম হয়ে মনিপুরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী নাথান বম পাহাড়ের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বাধীন কুকি রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ২০২২ সালে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করেন। এর দুবছর পর সরকারের সঙ্গে ‘শান্তি সংলাপ’ চলার সময়েই হঠাৎ রুমায় ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্রশস্ত্র লুট করে কেএনএ-র সদস্যরা পিছু হটে।
এদিকে গত ২৩ জুন ‘রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে’ ইউপিডিএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সে সময় আইএসপিআর ভোর ৪টায় ওই অভিযান শুরুর কথা জানালেও এ সম্পর্কে আর বিস্তারিত জানায়নি।
দৃশ্যত, গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ তো বটেই, এমনকি সেখানের কোনো আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করল।
এর আগে ২০ জুন সেনা বাহিনী এক বিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবান জেলার টংগবতি ইউনিয়ন থেকে ‘সশস্ত্র ৯ চাঁদাবাজ’ আটকের কথা জানায়।
সে সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি গাদা বন্দুক, একটি সেমি-অটো রাইফেল, দুটি গান ব্যারেল, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও চাঁদা আদায়ে ব্যবহার হওয়া অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।