ভারত বুধবার রাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ৮ জন নিহত ও ২৫ আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, দেশটির পাল্টা প্রতিরোধ হামলায় ভূপতিত হয়েছে ৫টি ভারতীয় যুদ্ধ বিমান।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতের ‘অপরাশেন সিদুঁর’ নামের এই হামলার লক্ষ্য ছিল ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’—যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল বলে দেশটি দাবি করেছে।

হামলার বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছে, ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া ছিল নিয়ন্ত্রিত, সুপরিকল্পিত এবং উত্তেজনা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নয়। পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। টার্গেট নির্বাচনে এবং আক্রমণের পদ্ধতিতে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।’
এদিকে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ওই হামলায় তাদের পক্ষের ৮ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
তবে পাকিস্তান সরকারের দাবি, ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব স্থানই বেসামরিক এলাকার। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ জিও টেলিভিশনকে বলেন, ‘যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে, তার মধ্যে দুটি মসজিদও রয়েছে। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।’

গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগামে এক বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহতের জেরে ভারত সরকার পাকিস্তানে ওই হামলা চালাল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে আসছে। পাকিস্তান অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, ভারতই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
দৃশ্যত, ক্ষেপনাস্ত্র হামলা ও পাল্টা প্রতিরোধের মাধ্যমে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল দক্ষিণ এশিয়ার পারমানবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ।
ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আন্দবাজার ডটকমের খবরে বলা হয়, ভারতের ওই সামরিক অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘অপরেশন সিদুঁর’। যা সনাতন ধর্মের বিবাহিত নারীদের মাথার সিঁথিতে লাল চিহ্নে সধবা বোঝান হয়। পাহেলগাম হামলায় যেসব নারী বিধবা হয়েছেন, তাদের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধা জানাতেই অভিযানেরও ওই নামকরণ বলে অনেকের ধারণা।
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হামলার ভিডিও ও বিস্ফোরণের দৃশ্য প্রচার করেছে। ভিডিওতে রাতের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলি, আগুনের ফুলকি ও আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি দেখা যায়। তবে এসব ভিডিওর সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।
ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি এ তথ্য জানান।
এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী দুইটি যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। এবার তিনি বলেন, ‘মোট পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হয়েছে।’ তবে এসব বিমানের ধরন, ধ্বংসের স্থান কিংবা সময় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবির বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি। একই সঙ্গে স্বাধীন কোনো উৎস থেকেও দাবিটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীমান্ত পরিস্থিতি ঘিরে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমাদের বাহিনী স্থলেও অবস্থান নিয়েছে।’ তবে তারা কোথায় অবস্থান করছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
শরীফ আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং আমরা সেই অধিকার প্রয়োগ করছি।’
কাশ্মীর সীমান্তে সাম্প্রতিক হামলা এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা আগেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। জাতিসংঘ বরাবরই যুদ্ধের বদলে শান্তি সংলাপের সমাধানের জন্য দুই দেশকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। তাদের আশঙ্কা, দক্ষিণ এশিয়ার এর প্রভাব অনেক দূর গড়াবে।