ভোটের আগে ওসি-এসপির বদলি হবে লটারিতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : টাইমস
Highlights
  • জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কেন্দ্রেই একটি করে বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। পুলিশের মধ্যে যিনি সিনিয়র পদধারী থাকবেন, তার কাছে এই ক্যামেরা থাকবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করবে সরকার। আর এই বদলির জন্য ব্যবহার করা হবে লটারি পদ্ধতির।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে একথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই ওই সময় এসপি এবং ওসিদের লটারির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কিছুদিন আগে এই লটারি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ সিডিউল ডিক্লেয়ার করার পর এসব বদলির কাজ চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। এরপর যদি নির্বাচন কমিশন সেটাকে আরো চেঞ্জ করতে চায় তাহলে তারা তা করতে পারবে।’

এভাড়া সভায় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপদেষ্টা জানান, এবার ভোটের সময় প্রিজাইডিং অফিসার যেন কারো বাসায় না থেকে ভোটকেন্দ্রেই থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কেন্দ্রেই একটি করে বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। পুলিশের মধ্যে যিনি সিনিয়র পদধারী থাকবেন, তার কাছে এই ক্যামেরা থাকবে।’

নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সব বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এছাড়া নির্বাচন কমিশন পোলিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে। বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণের পর তাদের মহড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভালোভাবে হতে পারে সে অনুশীলন করা হবে।’

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, গত ৯ জুলাই যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন প্রস্তুতি ও সংস্কার সংক্রান্ত বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী, নির্বাচনী সামগ্রী আগেই জেলা ও উপজেলায় নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে। সব ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বডি ক্যামেরা পরা বাধ্যতামূলক করা হবে। জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ১ লাখ ৪১ হাজার, অঙ্গীভূত ও সাধারণ আনসার (অস্ত্রসহ) ৪৭ হাজার, অস্ত্র ও লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭ হাজার, লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭ হাজার এবং গ্রাম পুলিশ ও দফাদার ৯৪ হাজার জন। নির্বাচনে ৬০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসার তার আওতাধীন এলাকায় একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সেল গঠন করবেন। রিটার্নিং অফিসার জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে একটি বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করে নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।

১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের জন্য আলাদা বুথ ও সহায়ক ব্যবস্থা রাখতে এবং নারী ভোটারদের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা যেন নির্বাচনকালে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ও নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে মোবাইল কোর্ট টিম গঠন করা হবে। তারা ভোটের দিন ও তার আগে-পরে সংঘটিত সহিংসতা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবেন।

রিটার্নিং অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। এসব ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন না করতে পারে, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সহিংসতা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী উদ্ধারে টার্গেটেড অভিযান চালাবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *