‘নবাব সলিমুল্লাহর নাতি’ পরিচয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া আলী হাসান আসকারী নামে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবারও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মিল ও কারখানা দখলের চেষ্টায় তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি নবাব পরিবারের সদস্য নন জানিয়ে সম্প্রতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা নবাব বি এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন। এটি সরকার নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি পরিচালনা করেন নবাব পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নবাব খাজা সৈয়দ আলী হাসান আসকারী নাম ধারণ করে এক ব্যক্তি নিজেকে নবাব হাসান আসকারী সাহেবের পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে নবাব পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ছবি তাদের অগোচরে সংগ্রহ করে সেগুলো তার ফেসবুক পেইজে উপস্থাপন করছে। উপরোক্ত বিষয়ে অবগত হলে নবাব হাসান আসকারী সাহেবের পরিবার তার এ দাবির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।’
আলী হাসান আসকারী পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি নবাব পরিবারের সম্পত্তি বিক্রির জন্য বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে জানিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। তার সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন বা চুক্তি করার বিষয়েও সতর্ক করেছে ঢাকা নবাব বি এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন।
এর আগে ২০২০ সালে ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার হওয়েছিলেন এই ব্যক্তি। সেসময় তিনি নিজেকে ‘নবাব পরিবারের উত্তরসূরি’ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় দুবাইয়ে স্বর্ণকারখানা, বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত এবং ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, তিনি নিজে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিকসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা আসকারী মন্ত্রী-সাংসদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা ও চিকিৎসা পরীক্ষার নামে ৮০০ টাকা নিতেন। কয়েক হাজার ভুক্তভোগীর কাছ থেকে এভাবে অন্তত ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে এবং তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া মেডিকেল সনদ, নবাব পরিবারের নকল সিল, ভিওআইপি সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
মামলার বাদী ফেনীর শিক্ষক আবদুল আহাদ সালমান জানান, আসকারী চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তার এলাকার প্রায় ৪০০ যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। পরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
সম্প্রতি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আসকারী নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় নবাব পরিবার। এবারও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি প্রতারণায় নেমেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কোহিনুর আলম কাকা এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও মোহামেডান ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় কায়সার হামিদের সঙ্গে এই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে কাকা ও কায়সার হামিদ নবাবের নাতি হিসেবে আলী হাসান আসকারীকে পরিচয় করিয়ে দেন। যা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তবে এ বিষয়ে কাকা ও কায়সার হামিদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।