সিলেটের জকিগঞ্জে দাফনের আগমুহূর্তে বিস্ময়কর এক ঘটনা ঘটেছে। যে ব্যক্তিকে মৃত ভেবে দাফন করতে যাচ্ছিল পরিবার, পরে জানা গেল- তিনি এখনো জীবিত। ‘ভুল লাশ’ (অন্য ব্যক্তির মরদেহ) দাফনের ঘটনাটি জানাজা ও কবর খোঁড়ার মুহূর্তে ধরা পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
রোববার সকালে জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের (এতিছানগর) এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক।
জানা গেছে, ঘটনাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাবু আহমদ নামের এক ব্যক্তি, যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং সম্প্রতি নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে সাবুর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার রাতে সাবুর ছোট ভাই বাবুল আহমদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি মৃতদেহের ছবি দেখে নিশ্চিত হন যে সেটিই তার ভাইয়ের লাশ।
এরপর রাতেই জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাশটি বাড়িতে নিয়ে আসেন বাবুল। পরিবারের সদস্যরা তাকে সাবুর মৃতদেহ হিসেবে ধরে নিয়ে দাফনের জন্য কবর পর্যন্ত প্রস্তুত করে ফেলেন।
কিন্তু নাটকীয় মোড় নেয় মধ্যরাতে। বাবুল আহমদের এক পরিচিত ব্যক্তি খবর দেন- সাবু আহমদ জীবিত এবং স্থানীয় গঙ্গাজল বাজারে অবস্থান করছেন। তড়িঘড়ি করে দাফনের প্রক্রিয়া থামানো হয়।
বাবুল জানান, ‘আমার ভাই সাবু মানসিক রোগী। হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহটি দেখার পর আমাদের মনে হয়েছিল, এটাই ওর মরদেহ। তাই কবরও খুঁড়ে ফেলি। কিন্তু পরে জানতে পারি সে এখনো বেঁচে আছে।’
বাবুল আরও বলেন, হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর যুবনেতা মিজানুর রহমানের অনুরোধে সেটি দাফন করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগেই আত্মীয় পরিচয়ে লোকজন এসে মরদেহ নিয়ে যান। পরে জানতে পারি, যাকে মৃত ভেবে নেওয়া হয়েছিল, তিনি জীবিত।’
জানাজার ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেই মানবিক বিবেচনায় জানাজা পড়িয়েছি এবং দাফনের অনুমতি দিয়েছি।’
অন্যদিকে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। তখন নিয়মমাফিক লাশ সিলেটে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কিছু লোক আত্মীয় পরিচয়ে এসে মরদেহটি নিয়ে যান। এখন জানা যাচ্ছে, মরদেহটি তাদের আত্মীয় নয়।’
রোববার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় এতিছানগর জামে মসজিদে জানাজা শেষে বাবুর বাজার-সংলগ্ন কবরস্থানে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়।
এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসার পর ‘মরদেহ সনাক্তকরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।