ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ চায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্র শিবির আয়োজিত এই প্রদর্শনীর নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছবি : ফেসবুক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথমবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এই ঘটনা জন্য ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ক্ষমা চাইতে বলেছে শিক্ষকদের সংগঠনটি। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।

বুধবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবির প্রদর্শনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নাগরিকেরা এসব ছবি প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা তার কার্যালয় সারাদিনে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি যে, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম বেশ ধীর গতিতে এই ছবিগুলো অপসারণ করে।’

‘নানা মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিডিও থেকে দেখা যায় যে, এই ছবি সরানোর আগে একজন সহকারী প্রক্টর উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষের কথা শোনেন এবং ছবি সরানোর নির্দেশ দেন। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরাই ছবিগুলো খুলে ফেলেন বলে বিভিন্ন ভিডিও থেকে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরের ভিডিওতে দেখা যায় যে, কিছু মানুষ দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে ছাত্ররা ‘মব’ করে ছবি খুলেছে বলে দাবি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদরত সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড়ায় ইসলামি ছাত্র শিবির। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিম আরও আগে ব্যবস্থা নিলে এবং গাফিলতি না করলে পরিস্থিতি এত দ্রুত উত্তেজনাকর হয়ে উঠত না।’

এসময় প্রতিবাদকারী ছাত্রীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করার সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের চৌমুহনীর কচুয়া গ্রুপের এক সক্রিয় সদস্যকে আটকের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে বাধা থাকার পরোও বাইরের একজন শিক্ষার্থী কীভাবে প্রবেশ করেছিল, সে প্রশ্নও তোলে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে চিহ্নিত অপরাধীদের ছবি দিয়ে জুলাই উদযাপন করা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা জানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যা বিতর্কের উর্ধ্বে, তা হলো এই যুদ্ধাপরাধীদের একাত্তরের গণহত্যার দায়। কারণ, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হলেই অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।’

এ ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অদক্ষতা ও অক্ষমতা উল্লেখ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যেমন প্রশাসনের একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সম্মান রক্ষা করাও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে তারা আবারও ব্যর্থ হয়েছেন।’

‘যারা চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা করে, তারা আসলে চব্বিশের  শহীদদের আত্মত্যাগকেও ছোট করে ফেলে। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে তাকে ’৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির। এর আগে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে বিতর্কিত লেখা ছেপেছিল তাদের নিজস্ব প্রকাশনায়। ব্যাপক বিতর্কের মুখে তারা তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। আবারও একই লক্ষ্যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করেছে বলে আমরা মনে করি। এই ছবিগুলো একাত্তরের লাখো শহীদের রক্তের প্রতি এবং আমাদের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান, যা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না।’

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেইসঙ্গে তাদের কাছে এ প্রতিশ্রুতিও চাওয়া হয়েছে যে, তারা কখনই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না।

এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্তে রঞ্জিত ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করার দাবি জানানো হয়েছে।

গত এক বছরে সংঘটিত একাধিক শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনায় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগও দাবি করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানি রোধ করতে যেসব সংগঠন বা গ্রুপ ও গ্রুপের সদস্য এ সকল কাজে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এবং ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *