জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিহতদের সবাইকে শনাক্ত করে সঠিক তালিকা প্রকাশ ও তাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে মর্যাদা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
শুক্রবার রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান তারা।
‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মিলন- অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। এক বছর পরেও জুলাই হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রাজধানীর মিরপুরে নিহত মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা বলেন, ‘গত একবছর রাজনৈতিক দলগুলো কোথায় ছিল? এখন বর্ষপূর্তিতে সবাইকে দেখছি। শহীদ পরিবারগুলো তাদের ন্যায্য মর্যাদা এখনো পায়নি। অথচ একটা বছরে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কিছুই পেয়েছে।’
উত্তরায় নিহত ওমর নুরুল আফসারের স্ত্রী ফারজানা নীলা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো শহীদদের রক্তের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। জুলাই সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার তা দেয়নি। পরিচিত কিছু শহীদ পরিবারকে সুবিধা দিচ্ছে, তারা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় দেড় হাজার পরিবারের আর্তনাদ আড়ালে চলে যাচ্ছে।’
নিহতদের সবার পরিচয় শনাক্ত করে নিখুঁত তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘১৮ থেকে ২০ জুলাই ইন্টারনেট না থাকা অবস্থায় যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রায়েরবাজারে গণকবরে ১২৭টি লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে। আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে তাদের অনেকের তথ্য আছে। তাদের ডিএনএ প্রোফাইলিং করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিহতদের পরিচয় জানা যেতো। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া সেসময় ১৬৮ জন পথশিশু মারা গেছে, একটা গবেষণা সংস্থা এটা বের করেছে।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান আশরাফ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক। তাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই আন্দোলন ধারাবাহিক মুক্তির লড়াইয়ের একটা পর্ব। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছেন। আমাদের কাজ সেই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশের অর্থনীতিকে ও রাজনীতিকে আর কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত হতে দেওয়া যাবে না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহিন সুলতান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নাভিন মুরশিদ, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী সীমা আক্তার, এসসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈকত আরিফ, জাহিদ সুজন ও ফারহানা মানিক মুনা।