সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর থেকে জাতীয় দলের বাইরেই আছেন নুরুল হাসান সোহান। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার, তবুও ডাক পাননি নির্বাচকদের। মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরের পর মিডল অর্ডারের শূন্যতা ঘুচাতে সোহান বিবেচনায় আসবেন নির্বাচকদের, এমনটাই ভাবনা ছিল অনেকের। কিন্তু শ্রীলংকা সফরের দলে জায়গা হলো না ঘরোয়া ক্রিকেটের গত কয়েক বছরের এই নিয়মিত পারফর্মারের। যেন ভাগ্যের সঙ্গে অসম লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। বারবারই নির্বাচকদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে। তাই আক্ষেপ করেই বললেন, নিয়মিত সুযোগ পেলে ক্যারিয়ারটা অন্যরকমও হতে পারত তার।
সোমবার রাতেই চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সবুজ ও লাল দলে ভাগ হয়ে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন ওয়ানডের রাডারে থাকা ক্রিকেটাররা। সেই ম্যাচে লাল দলের হয়ে ৭০ বলে ৭টি করে ছক্কা আর চারে ৯৭ রান করেন সোহান। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই উইকেটকিপার-ব্যাটার জানান, জাতীয় দলে নিয়মিত সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপের কথা।
সোহান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই ৫০ ওভারের ম্যাচগুলো ভালো যাচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের মৌসুমগুলোও ভালো যাচ্ছে। শেষ যখন ওয়ানডে খেলেছি, হয়তো ভালো করেছিলাম। যদি নিয়মিত হতে পারতাম, তাহলে হয়তো ক্যারিয়ারটা অন্য রকম একটা জায়গায় থাকত। বারবার মনে হয়েছে জাতীয় দল যদি চান্স না পাই, তাহলে খেলে লাভ কী? আমি তো আসলে দেশের হয়ে খেলতে চাই। সেটাই মূল লক্ষ্য। ক্লাব ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে ক্যারিয়ার শেষ করার কোনো ইচ্ছে বা লক্ষ্য নেই। আমি চাই, নিজের মেধা, যোগ্যতা আর সামর্থ্যের সবটুকু আমার দেশ ও জাতীয় দলকে দেওয়ার। তা যদি না পারি তাহলে খেলে কী লাভ?’
সোহানের এই আক্ষেপের নেপথ্যে যে পারফরম্যান্স আছে, সেটা এড়িয়ে যাওয়ার মতো না। যদি ওয়ানডে দলের জন্য কোনো ক্রিকেটারকে ভাবা হয়, নির্বাচকরা বিবেচনায় নেন দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটকে। একমাত্র ওয়ানডে টুর্নামেন্ট ডিপিএলের গত মৌসুমে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে ১১ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ৩ ফিফটিতে করেছেন ৫১২ রান। এর এক মৌসুম আগে সোহানের ব্যাট থেকে আসে ৪৯৫ রান। সেই পারফরম্যান্সে ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েও ভালো করেছেন। কিন্তু খুলেনি জাতীয় দলের দরজা।
সেই কষ্ট লুকাননি বাংলাদেশের হয়ে ১১ টেস্ট, ৭ ওয়ানডে আর ৪৬ টি-টোয়েন্টি খেলা সোহান। ৩১ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার বলেন, ‘অবশ্যই আক্ষেপ ওই জায়গায় আছে। ওই সুযোগটা হয়তো নিতে পারি নাই যেকোনো কারণে। আক্ষেপ থাকবে। যেহেতু জাতীয় দলে খেলা একটা গর্বের ব্যাপার, যখন জাতীয় দলে খেলার ওই স্বপ্ন বা আশাটুকু থাকবে না, তখন আর ক্রিকেট খেলব না।’
সোহানকে ওয়ানডে দলে না নেয়ার ব্যাখাও সোমবার দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ার পর শ্রীলংকা সফরে ফেরানো হয়েছে লিটন দাসকে। আছেন আরেকজন উইকেটকিপার জাকের আলী অনিকও। তাই সোহানকে বাড়তি উইকেটকিপার হিসেবে নিতে চাননি তারা। তবে নির্বাচকদের ভাবনায় সোহান আছেন, এ কথা নিজেই জানিয়েছেন লিপু।
বিসিবির প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘সোহান অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় আছেন। তিনি একজন কার্যকরী খেলোয়াড়, বিশেষ করে ছয়-সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে। তাই তাকেও আমরা ভবিষ্যতে দলে দেখতে পাবো বলে আশা করছি এবং কোনো একজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবে দেখার জন্য সামনে এশিয়া কাপের আগে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশের মাঠে ম্যাচ, তারপর ভারতের সঙ্গে সিরিজ; এই পুরো সময়কে আমরা কাজে লাগাতে চাই। যাতে করে আমরা যাদের যাচাই করা দরকার, তাদের ভালোভাবে দেখে নিতে পারি।’