জাকসু নির্বাচন: বুলিং- সাইবার হয়রানির শঙ্কা থেকে সামনে আসছে না নারী নেতৃত্ব

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। ছবি: ইউএনবি

তিন দশকের বেশি সময় পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। তবে ভোটারদের অর্ধেক নারী হলেও নেতৃত্বে তাদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তুলনামূলক কমসংখ্যক নারী শিক্ষার্থী।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তা, চরিত্রহনন, পারিবারিক ও সামাজিক নিরুৎসাহনসহ নানা কারণ রয়েছে এর পেছনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই জাকসু নির্বাচনের স্বচ্ছ ধারণা পাননি, আবার কেউ কেউ এটিকে সরাসরি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখে অংশ নিতে অনাগ্রহী। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে তারা দেখছেন সাইবার বুলিং ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চরিত্রহনন, গুজব ছড়ানো, ছবি বিকৃতি, ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এসব আতঙ্কে অনেক নারী শিক্ষার্থীই নির্বাচন থেকে দূরে থাকছেন।

পাশাপাশি পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা সমাজ থেকেও নারীরা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বাধা ও আপত্তির মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে, নির্বাচনী পরিবেশ নারীদের জন্য এখনো পুরোপুরি অনুকূল নয়।

‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল থেকে এজিএস (ছাত্রী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মালিহা নামলাহ। তিনি বলেন, ‘নারীদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার প্রধান কারণ সাইবার বুলিং ও হেনস্তা। সমান সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নারীদের জায়গা না থাকাও বড় কারণ।’ তার মতে, সচেতনতামূলক সেমিনার, ক্যাম্পেইন এবং সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।

অন্যদিকে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে এজিএস (ছাত্রী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। তিনি বলেন, ‘নারীদের নেতৃত্বে আসতে গেলে সমাজই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মীয় চিন্তাধারা থাকলে “ছাত্রী সংস্থা” বলে ট্যাগ করা হয়, মুক্তচিন্তা করলে “শাহবাগী” বলে ব্যঙ্গ করা হয়। চরিত্র নিয়েও কটাক্ষ করা হয়। এতে পরিবারগুলোও মেয়েদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।’

জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্ররাজনীতিতে নারীদের অনাগ্রহের প্রভাব পড়েছে প্রার্থী মনোনয়নের ওপরও। বিশেষ করে ছাত্রীদের হলে একাধিক পদে কোনো প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, কেন্দ্র ও হল মিলিয়ে ৮১৩টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ হলেও জমা পড়েছে ৭৪০টি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে জমা পড়েছে ২৭৩টি এবং হল পর্যায়ে ৪৬৭টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের মধ্যে ছাত্রীদের ১০টি হলে প্রার্থী সংকট সবচেয়ে বেশি। কোথাও ৬টি, কোথাও ১০টি পর্যন্ত মনোনয়ন জমা পড়েছে, আবার অনেক পদেই কোনো প্রার্থী নেই। জাহানারা ইমাম হলে জমা পড়েছে ১৬টি, প্রীতিলতা হলে ১৩টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১টি ও সুফিয়া কামাল হলে ১০টি। সবচেয়ে কম ৬টি করে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৩ নম্বর ছাত্রী হল (সাবেক শেখ হাসিনা হল) ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা, তারামন বিবি, রোকেয়া এবং বঙ্গমাতা হলে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১৫ থেকে ১৭টি।

ছাত্ররাজনীতিতে নারীদের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতিতে নারীর নেতৃত্ব তৈরির জন্য পরিবেশ এখনো যথেষ্ট সহায়ক নয়। সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তা এবং নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় অনেকেই নেতৃত্বে আসতে সাহস পান না।

এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নারীদের হেনস্তা বা সাইবার বুলিংয়ের এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘৩৩ বছর পর আমরা নির্বাচন করছি। এতে অংশগ্রহণ সবার অধিকার, কাউকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *