‘সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফর করছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অতিরিক্ত মার্কিন শুল্ক আরোপ, অন্যদিকে চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত বিরোধ– বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তির সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংকটের মধ্যেই মোদীর এই সফর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন-দিল্লি টানাপোড়েনের পর বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। সে উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সাত বছর পর তার এই সাংহাই সফর।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়, জাপানে দুইদিনের সফর শেষে শনিবার চীনে যান তিনি। রোববার ও সোমবার সাংহাই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদী।
এদিকে, সব দুরত্ব মিটিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরমানু শক্তিধর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এসসিও সম্মেলনের সাইডলাইনে শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেরও সম্ভাবনা আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের কড়া নজরদারিতে আছেন পুতিন।

বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের হীরা, চিংড়ি, দুগ্ধজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক (জরিমানা শুল্ক) কার্যকর করেছে ওয়াশিনটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, এটি রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার ‘শাস্তি’।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়েই চীনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। সে রেশ এখনও কাটেনি।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের ‘চালিকাশক্তি’ হিসেবে প্রভাব রাখছে বলেও মনে করছেন অনেকে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি আগ্রাহ্য করে রাশিয়ার কাছে থেকেও তেল কেনা জারি রেখেছে ভারত। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পরে দিল্লি-মস্কো সখ্যতাও নতুনমাত্রা পেয়েছে।
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ভারত-চীন সীমান্ত ইস্যু, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. চিতীগজ বাজপায়ী ও ইউ জিয়ের ভাষায়, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত ও চীন দুটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। কেবল দক্ষিণ এশিয়াই নয়, দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক গোটা বিশ্বের ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’

চিতীগজ বাজপাই’র মতে, ‘ভারত কখনওই চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের প্রত্যাশিত সুরে কথা বলেনি। তার পেছনে কাজ করেছে ব্রিকসের মতো শক্তিশালী জোটে ভারত-চীনের অংশীদারত্ব। কাজেই সাত বছর পরে মোদীর এই চীন সফর হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের অর্থনীতি এখন চার ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। প্রবৃদ্ধিও ছয় শতাংশের ওপরে। ২০২৮ সালের মধ্যে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে।
অন্যদিকে চীন ইতোমধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা, বিশ্ব বাণিজ্যেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
তবে আন্তর্জাতিক চিন্তা কেন্দ্র ‘চ্যাথাম হাউস’ বলছে, দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুসুলভ আচরণ সহজ হবে না। চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধ পুরোনো তো বটেই, এটি একই সঙ্গে গভীরও।
গালওয়ান উপত্যকায় একাধিক সংঘর্ষ, আকাশপথে বিধিনিষেধ, ভারতীয় বাজারে চীনা অ্যাপের নিষেধাজ্ঞা, তিব্বত, দালাই লামা, অভিন্ন নদী নিয়ে বিরোধ– দুই প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা।
সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরে বন্দুক হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও চীনের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল মোদী সরকারের বিপক্ষে।
এমন প্রেক্ষাপটে মোদী সরকারের ‘আন্তর্জাতিক ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন’ আকাঙ্খাকে জিনপিং সরকার কতটা সাদরে গ্রহণ করবে, সেদিকে এখন সারা বিশ্বের নজর।