ঘৃণা ও অপতথ্য রোধে মেটার সক্রিয় ভূমিকা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মেটার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাবলিক পলিসি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন মিলনার এবং পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রুজান সারওয়ার। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপতথ্য ও ঘৃণামূলক কনটেন্ট মোকাবিলায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ পরিচালনাকারী মেটা কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মেটার দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাবলিক পলিসি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন মিলনার ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রুজান সারওয়ারের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘অপতথ্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আপনাদের বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উপায় বের করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। একটি ভুল তথ্য কিংবা উত্তেজনাকর শব্দ পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবেই এমন কাজ করে। তাই প্ল্যাটফর্মগুলোর পরিচালনায় নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখা জরুরি, না হলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’

বৈঠকে মেটার পক্ষ থেকে সাইমন মিলনার জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে তারা প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমাদের পাঁচ বছর ধরে একটি ডেডিকেটেড টিম কাজ করছে। সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।’

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাংলা ভাষার প্রতি মেটার নজর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘মেটার এআই ও ভাষাভিত্তিক মডেল এখনও ইংরেজিনির্ভর, যা আমাদের মতো দেশের জন্য সহায়ক নয়। বাংলা ভাষায় কনটেন্ট ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার মেটা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের এক বৈঠকে বাংলা ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনুভূতি বিশ্লেষণে মেটাকে বিনিয়োগ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে ভুয়া খবর শনাক্তে বেশি সংখ্যক বাংলা ভাষাভিত্তিক পর্যালোচক নিয়োগেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়।

আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন, এমন বাংলাদেশি কনটেন্ট রিভিউয়ার নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে ক্যাশ সার্ভার ও এজ রাউটার স্থাপনের মাধ্যমে পরিষেবার মান উন্নয়ন, ব্যান্ডউইথ অপটিমাইজেশন ও ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

মঙ্গলবারের আরেক বৈঠকে পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধিরা নাগরিক সুরক্ষার প্রশ্নে ক্ষতিকর পোস্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুততর করার অনুরোধ জানান মেটা কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি হুমকি, মিথ্যা তথ্য, গণউত্তেজনা ও আত্মহত্যার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে আরও দ্রুত ও কার্যকর সহযোগিতা চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই আলোচনাগুলো চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে মেটার ভূমিকা আরও সুসংহত ও বাস্তবভিত্তিক করতে এক ধাপ এগিয়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *