গত ১৬ বছরে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এবং তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে আলাদা তহবিল গঠনের দাবি উঠেছে।
বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি উঠে আসে। ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিরাও অংশ নেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকার কথা। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর আর্থিক সংকটের কথাও বলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দাবি ওঠে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি এবং ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা দিতে আলাদা তহবিল গঠনের। বক্তারা গুমের শিকার ব্যক্তিদের মানসিক পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান।
এসময় গণহত্যা-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন’ গঠনেরও দাবি জানানো হয়।
নিজের বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন বলেন, ‘গুমের শিকার পরিবারকে সহায়তা করতে কত টাকার দরকার? রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে সব সম্ভব। বিএনপি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পেলে এই কমিশন গঠনে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে।’
বারবার সেমিনার না করে বাস্তবভিত্তিক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের ব্যবহার করে যেন কেউ রাজনৈতিক ফায়দা না লুটতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, আমরা তা করতে পারছি না। অবশ্যই বিচার দরকার, কিন্তু দ্রুত বিচার করতে গিয়ে যেন নতুন করে অবিচার না হয়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা শুধু ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক না হয়ে প্রয়োজনভিত্তিক এবং এটা বণ্টনের একটি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, ‘শুধু বিচার নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিশন গঠন জরুরি। আমি আন্তর্জাতিকভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
পরামর্শ সভায় গুমের শিকার একাধিক ব্যক্তি নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
কর্নেল হাসিনুর বলেন, ‘গুমের শিকারদের জঙ্গি মামলা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি কমিশনের মাধ্যমে এসব মিথ্যা নাটকের অবসান হওয়া উচিত।’
সেমিনারে ইউনিভার্সিটি অব রেজিনার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশনের ডিকলোনিয়াল লোকাল ফ্রেমওয়ার্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সুপারিশ আসে।
অনুষ্ঠানে আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহিন, বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক শর্মিলা নওশিন রিতু, জাতিসংঘের জুনিয়র কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।