জুলাইয়ের অভ্যুত্থানকে একটি সামষ্টিক ঘটনা আখ্যা দিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেন, সেই সময় ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির ভূমিকাই ছিল বড়। ব্যক্তিমানুষ তখন নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সমষ্টির মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে আন্দোলন বা অভ্যুত্থান অনেক বেশি ব্যক্তি-নির্ভর হয়ে ওঠে, যেখানে কে কত বেশি অবদান রেখেছে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
রোববার রাতে এক বিবৃতিতে উমামা লিখেছেন, ‘লড়াই এর সময় আসলে অবদানের প্রশ্ন গৌণ। অবদানের প্রশ্ন তখনই আসে যখন রাজনৈতিক ফায়দার প্রশ্ন আসে।’
তিনি বলেন, যে জনগণ তখন নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আন্দোলনকে সহায়তা করেছে, তাদের অবদানকে পরিমাপের কোনো মাপকাঠি নেই।
উমামা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘একজন চাকরিজীবী বাবা যিনি পুরো জুলাই মাসে আহতদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করেছেন, বিকাশ নাম্বার পেলে ১০-২০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন, এমনকি সাংবাদিকদের বিবৃতি পাঠানোর জন্য রিচার্জ করে দিয়েছেন- এই মানুষটার অবদানও সামান্য নয়। আবার একজন গৃহিনী যিনি রান্না করে মিছিলে খাবার বিতরণ করেছেন, সেটিও ছোট কথা নয়।’
তিনি লেখেন, শাহবাগের মিছিলে এক আঙ্কেল মিরপুর থেকে এসে পানি বিতরণ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোক করেন, পরে গুলির মধ্যে ফার্মগেট পর্যন্ত অন্যদের বাঁচাতে সহায়তা করেন- এই ঘটনাগুলোর কথাও স্মরণ করেন উমামা।
সেই সময় আহত এক ছেলেকে রিকশায় রক্ত ঝরতে ঝরতে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও তুলে ধরেন তিনি।
‘যে গৃহিনী খাবার দিলেন, যে আঙ্কেল পানি দিলেন, যে চাকরিজীবী মানুষ রিচার্জ করে দিলেন, তাদের অবদান কোন পাল্লায় মাপা যায়?- প্রশ্ন রাখেন উমামা ফাতেমা।
তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই নিজেদের অবদানকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেছে, যা আন্দোলনের স্বাভাবিক প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
উমামা ফাতেমা তার পোস্টের শেষে লিখেছেন, ‘ক্ষমতার সাথে আন্দোলনে অবদানের সম্পর্ক সমানুপাতিক হয়ে গেছে। যে ক্ষমতার যত কাছাকাছি, সে আন্দোলনে তত ত্যাগী। তাই ভবিষ্যতে আন্দোলনে নামার আগেই ক্ষমতা থেকে অবদানের সার্টিফিকেট নিয়ে নামাই শ্রেয়।’