ক্রিকেটের দেশে নারীদের এগিয়ে যাওয়া

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলের ঝলমলে মঞ্চ। মাঝে দাঁড়িয়ে ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা, হাতে দুটো অ্যাওয়ার্ড। তার দুই পাশে দাঁড়ানো জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে একটি করে অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কারের এই তারতম্যের নেপথ্যে কী? এই দুজনকে হারিয়ে শীর্ষস্থানীয় একটি জনপ্রিয় দৈনিকের দেয়া বর্ষসেরা ক্রীড়া অ্যাওয়ার্ডে প্রথম হয়েছেন দুইবারের সাফজয়ী নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা। 

বাংলাদেশের মতো ক্রিকেট প্রধান দেশে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হচ্ছেন একজন নারী ফুটবলার, খানিকটা অবাকই হতে হয়। এখানেই অবশ্য শেষ নয়। সেই দৈনিকের পাঠকদের ভোটেও বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় পুরস্কারটা জিতেছেন রাঙামাটির এই নারী ফুটবলার। 

গত এপ্রিলে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসপিএ) ক্রীড়া পুরস্কারের আয়োজন থেকেও ঋতুপর্ণা ফিরেছিলেন দুই হাত ভরে। বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ ক্যাটাগরিতে হয়েছেন রানার আপ। কিন্তু পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড আর বর্ষসেরা ফুটবলারের অ্যাওয়ার্ড ঠিকই জিতেছেন তিনি। 

এর বাইরে বিজ্ঞাপনী সংস্থা আর বড় ব্র্যান্ডগুলোর নজর ক্রিকেটারদের দিকে থাকলেও দৃশ্যপটে এখন জায়গা হারাচ্ছেন তারা। অথচ একটা সময় টিভি খুললেই বিজ্ঞাপনে দেখা মিলত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদের মতো তারকাদের। কোনো উঁচু দালানের ছাদে তাকালে চোখে পড়ত তাদেরই ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড। 

সেসবে বেশ বদল এসেছে। মাঠের পারফরম্যান্স, বিতর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে বাংলাদেশে, বিজ্ঞাপনী বাজারে দর কিছুটা হলেও পড়েছে ক্রিকেটারদের। সাকিবের মতো বড় তারকার অনুপস্থিতিও একটা বড় কারণ। তবে এসবের সাথে মার্কেটিং ট্রেন্ডের যুগবদলও একটা এক্স ফ্যাক্টর। 

ব্র্যান্ডগুলো এখন ইনফ্লুয়েন্সার, ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের সাথে কাজ করতেই বেশি পছন্দ করে। কারণ বড় তারকার চেয়ে তাদের সাথে কাজ করাটা আর্থিক দিক থেকে লাভজনক। একইসাথে কম সময়ে বেশি প্রচারের সুবিধাটাও তাদের থাকছে। মার্কেটিংয়ের বিচারেও সেসব ব্র্যান্ড বান্ধব। ক্রিকেটারদের ছেড়ে ফুটবলারদের পেছনে ব্র্যান্ডগুলোর পেছনে ছোটার কারণ হিসেবে ওরাইমো বাংলাদেশের সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিউভ অরিন্দম সাহা বলছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের মতো তারকার অনুপস্থিতিই দায়ী। 

তিনি বলেন, ‘হামজার কথাই ভেবে দেখুন, যখন দেশে এলো কী একটা ফেস্টিভ একটা ভাইব তৈরি হয়েছিল। এই স্টারডমই মিসিং এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আমরা যখন ওরাইমোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর খুঁজছিলাম, তখন প্রথম পছন্দ ছিল সাকিব। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য পরে আমরা তাহসানকে নিই। কিন্তু প্রথমে আমরা সাকিবইকেই চেয়েছিলাম।’

২০২৪ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে আসার পর টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার ঋতুপর্ণাকে দেখা গেছে একটি বড় ফুটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে। বাংলাদেশের নারী ফুটবল যে বিক্রয়যোগ্য সেটারও প্রমাণ ছিল এই বিজ্ঞাপন।এর আগে বেশ কয়টি টেলিকম প্রতিষ্ঠানও নারী ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করেছে। 

এ নিয়ে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ অরিন্দম বলেন, ‘ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পেইনগুলোতে বড় ব্র্যান্ডগুলো খুব একটা ইন্টারেস্টেড হয় না। আমার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বড় ব্র্যান্ডগুলো বড় তারকাদের পেছনেই ইনভেস্ট করে। সেই হিসেবে মেয়েরা আপাতত সেদিকে এগোচ্ছে।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিজিটাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কমিটর সদস্য অমিত হাসানের মতে,দিনশেষে মাঠের ফলাফলই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মার্কেটিং পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বললে মেয়েরা ফুটবলে ভালো করছে। যে কারণে সবার নজর ওদিকে যাচ্ছে। যেহেতু ক্রিকেটে একটু বাজে সময় যাচ্ছে সব মিলিয়ে, তাই অ্যাওয়ার্ডগুলোতে মেয়েদের ইনভলভমেন্ট বাড়ছে। একইসাথে বাফুফেতেও কিছু বদল এসেছে। বাফুফের সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিটি, মার্কেটিংয়ে একটা সময় কিছুই ছিল না। এখন বাফুফে অনেক গুছিয়ে কাজ করছে এসব জায়গায়। এই জিনিসটাও নারী দলকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।’ 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *