কার্যকরী সামাজিক বিপ্লব চান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’তে ফ্যাসিবাদবিরোধী মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: টাইমস
Highlights
  • ‘সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদ এতটা সংকটে রয়েছে, যে তাকে তার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা তৈরি করতে হচ্ছে। যে বিষয়টি বুঝতে হবে, মুক্তি আসেনি, মুক্তি আসবেও না যদি না এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ না করা যায়। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, সারা পৃথিবীর।’

দেশের বাম ধারার দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি কার্যকরী যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সামাজিক বিপ্লব তৈরি করতে হবে, তা না হলে টিএসসিতে ‘রাজাকারের’ ছবি টানানোর ঘটনা সারা দেশে আরও ‘বেগবান’ হবে বলে শতর্ক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’তে ফ্যাসিবাদবিরোধী মতবিনিময় সভায় বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার ”৩৬ জুলাই: আমরা থামব না” শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবির প্রদর্শনী করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, যা শিক্ষারর্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। আমরা জানি এই জামায়াত একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তায় আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠন করেছিল।’

দেশের এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল, পাকিস্তানি উপনিবেশ ছিল এখন ধনীদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে । ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিরা লুটপাট করলেও তারা কিছুটা বিনিয়োগ করত, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে পেলাম এক শ্রেণির লুটেরা সব লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে তবে রাজনৈতিক ধারা আছে দুটি একটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ধারা আরেকটি সমাজ বিপ্লবী ধারা। এই বুর্জোয়া ধারাটিই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সৃষ্টি করে। বুর্জোয়া পুজিবাদী ব্যাবস্থাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা। বুর্জোয়া পুজিবাদী ধারার মধ্যে দুটি ধারা আছে। একটি উদার গণতান্ত্রিক ধারা অন্যটি মৌলবাদী ধারা দুটি ধারাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে তরান্বিত করে।’

এখন আমাদেরকে ঠিক করতে হবে আমরা কোন ধারাটি বেছে নেব বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ধারা নাকি সমাজ বিপ্লবের ধারা। গণ-মানুষের মুক্তি চাইলে আমাদেরকে সমাজ বিপ্লবের ধারা বেছে নিতে হবে, যোগ করেন তিনি।

বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যাবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদ এতটা সংকটে রয়েছে, যে তাকে তার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা তৈরি করতে হচ্ছে। যে বিষয়টি বুঝতে হবে, মুক্তি আসেনি, মুক্তি আসবেও না যদি না এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ না করা যায়। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, সারা পৃথিবীর।’

মতবিনিময়কালে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হাসান প্রিন্স বলেন, ‘যে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম তারাই বুকের রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করল। অথচ রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমাদেরকে হতাশ হতে হলো। আগের সরকারের আমলে আমরা ভারতের নগ্ন আধিপত্য দেখতে পেয়েছি আর পিন্ডি আর ওয়াশিংটনের আধিপত্য।’

আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আমেরিকার আধিপত্য এখানে বেশি। আমরা দুঃশাসক হটাতে পারলেও দুঃশাসন হটাতে পারিনি, তিনি বলেন।

বাম গণতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি মাসুদ খান বলেন, ‘২০২৪ এর আন্দোলনের ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা ছিল ফ্যাসিবাদ হটানো। এ বিষয়ে সকলে একমত ছিলাম এবং আমরা তা করতে পেরেছি। কিন্তু বুর্জোয়া ব্যাবস্থায় ফ্যাসিবাদ আদৌ বিলোপ সম্ভব কি না সেই প্রশ্ন থেকে যায়।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘মব সৃষ্টি করে শুকবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির, রাজাকার-আলবদর, এনসিপির দলের ছাত্ররা, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে, তারাই গুপ্তভাবে নিজেদের রাজনীতি করতে সুবিধার জন্য মব সৃস্টি করে অন্যদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করছে।’

তার মতে, একটা সংস্কার করতে চাচ্ছে, সেটা হল বুর্জোয়া সংস্কার। সংস্কারের নামে তারা চুনকাম করতে চায়, সেখানে জাতীয় মূলনীতিতে হাত দিয়েছে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে ফিরোজ বলেন, ‘২৪ এর গণ আন্দোলন নাকি একাত্তরকে অতিক্রম করেছে, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ৭১ কে ২৪ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চাইলে, এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

বাসদ-মার্কসবাদীর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করলে চলবে না। এই বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসছে তারা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠছে, তাই আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকবে।’

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতা হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক সুনয়ন চাকমা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *