রাজধানীর বাড্ডায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘উনি রোববার রাত পৌনে ১০টায় বাসায় ফেরেন। তখন আমি নামাজ আদায় করছিলাম। বললাম আর তিন রাকাত নামাজ বাকি। শেষ করে খাবার দিচ্ছি, খেয়ে যান। এর মধ্যে একটা কল আসে। ওই কলে কথা বলতে বলতে তিনি দরজা বাইরে থেকে লক করে বের হয়ে যান।’

তিনি অশ্রু সজলে চোখে বলেন, ‘এর ২০ মিনিট পরেই খবর আসে তিনি (সাধন) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরআগেই নামাজ শেষ করে টেবিলে খাবার রেখেছিলাম, সেই খাবার আর কারোই খাওয়া হয়নি।’
জানা যায়, নিহত বিএনপি নেতা সাধনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে। বাবা-মা মারা গেছেন। সাধনের এক বোন। তিনি রাজধানীর উত্তরায় থাকেন।
ব্যবসায়িক জীবনের শুরুতে তিনি রাজধানীর গুলশান-১ এ দেশ রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে ক্যাবল ও ইন্টারনেটের ব্যবসায় নামেন সাধন। ‘স্বদেশ কমিউনিকেশনস’ নামক ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ততা ছিল সাধনের। রোববার রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট-৪ নম্বর গলিতে প্রকাশ্যে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
স্ত্রী দিলরুবা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘উনি প্রতিদিন সকাল ১০-১১টার মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে ফিরতেন রাত ১১-১২টার মধ্যে। কখনো কখনো আরো রাত করে ফিরতেন। সেদিন তিনি বাসায় ফেরেন রাত পৌনে ১০টায়।’
‘রাতে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র আর বিস্কিট কিনে নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো এখনো অক্ষত আছে।’ যোগ করেন তিনি।
দিলরুবা আক্তার বলেন, ‘ওনার সঙ্গে আমার ২৪ বছরের সংসার। আমাদের কোনো সন্তান নেই। অত্যন্ত সুসম্পর্কেই সংসার করছিলাম। কখনোই আমাদের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন আসেনি। মহল্লায় বড় হওয়া সাধনের সঙ্গে কারো বিবাদ-বিরোধ ছিল না। ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক কারণেও কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ বা দ্বন্দ্ব ছিল বলে কখনো শুনিনি।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার কাইয়ুমের ভাগনে কামরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বসা ছিলাম। সাধন মোবাইল টিপছিল আর কথা বলছিল। হঠাৎ দুজন এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে। দু’জনই মাস্ক পরা ছিল। গুলিতে সাধন ঘটনাস্থলেই পড়ে যান। এরপর ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায় ওই দুই সন্ত্রাসী।’
পুলিশ বলছে, বাড্ডা এলাকায় কেবল টিভি ও ইন্টারনেট ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে সাধনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাধন বাড্ডার রবিন–ডালিম–মাহবুব গ্রুপের মাহবুবের মামা। তাকে গুলি করেছে বাড্ডার আরেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মেহেদী গ্রুপের অনুসারীরা। তারা বৃহস্পতিবারও তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।
গত ২১ মার্চ গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামে এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি ছিলেন মেহদে গ্রুপের অনুসারী। তাকে হত্যা করেছিল রবিন, ডালিম ও মাহবুব গ্রুপের লোকেরা। ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুমন হত্যার প্রতিশোধ নিতেও সাধনকে হত্যা করা হতে পারে।
পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত দুইজনের শারিরীক আকার ও গঠন অনুযায়ী আমরা ৫-৬ জনের একটি তালিকা করেছি। তবে এ পর্যন্ত সিডিআর রেকর্ড অনুযায়ী সন্দেহভাজনদের “লোকেশন” ঘটনাস্থলের আশেপাশে পাওয়া যায়নি।’
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুদারাঘাট ৪ নম্বর গলিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপি নেতা সাধন গুলিতে নিহত হন। সে সময় তিনি স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে আরও চার-পাঁচজনের বসেছিলেন।
ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুজন হেঁটে এসে সাধনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পুরো হত্যাকাণ্ডে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ড। মাস্ক পরা সন্ত্রাসীরা সাধনকে কয়েক রাউন্ড গুলিতে হত্যার পর আরও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে হেঁটেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। কেউ তাদের বাধা দেওয়ার সুযোগ পাননি।