অন্তর্বর্তী সরকার আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না পেলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে ডাক পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
বৃহস্পতিবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ প্রত্যাশার কথা গণমাধ্যমকে জানান দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। একটি দ্বন্দ্বময়, একটি রাজনৈতিক টালমাটাল সময় বাংলাদেশ পার করছে। আশা করি এর মধ্যে কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে। সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন গণতন্ত্রের আলো প্রস্ফুটিত হবে।’
সিইসির কাছে নিজেদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছেন জানিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘উনি (সিইসি) নোট দিয়েছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এবং আস্থা আছে যে কমিশন সুষ্ঠু ভোটের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও কমিশন চেষ্টার ত্রুটি রাখবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘নিরপেক্ষ’ না হলেও নির্বাচন কমিশন ‘নিরপেক্ষ’ থেকে জাপাসহ সব দলকে ডাকবে বলে আশা প্রকাশ করে মহাসচিব বলেন, ‘ইসি সকল নিবন্ধিত দলকে ডাকবে, কথা বলবে। আমরা ইসির ক্লায়েন্ট। আমরা জনগণের প্রতিনিধি। ইসির দায়িত্ব সকল নিবন্ধিত দলকে ডাকা, তাদের কনসার্ন শোনা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এটি খুব দুরহ কাজ। কিন্তু এটি ইসিকেই করতে হবে।’
ইসিকে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না, ইসি একা পারবে না।’
আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে গত তিন নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টিকে অযোগ্য ঘোষণার দাবি এসেছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অযোগ্য ঘোষণার জন্য আরপিওর কোনো বিধিতে জাপা পড়ে না। নিষিদ্ধ করার দাবি দুঃখজনক।’
এ ধরনের দাবি প্রত্যাহার করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল ওইসব ভোটে। স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াতের নেতারা অংশ নিয়ে এখনও জনপ্রতিনিধি আছেন, পরে তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি। জাতীয় পার্টিকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। ভোটে অংশ অংশ নেওয়ার জন্য কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক।’
সম্প্রতি জাতীয় পার্টি বেশ কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যার মধ্যে জিএম কাদেরকে বাইরে রেখে কাউন্সিল করার ঘটনা একটি। সেই কাউন্সিলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। এ অংশটি এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়টি জানতে চাইলে শামীম পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ২৮ জুন কাউন্সিল করাকে কেন্দ্র করে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সেই দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সিনিয়র কিছু নেতৃবৃন্দ, জিএম কাদেরকে ছাড়াই কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তাদের রেজ্যুলুশনের মাধ্যমে বহিস্কার করা হয়। ওই চিঠি চ্যালেঞ্জ করে তারা মামলা করেন। তবে সেটা এখনো বহিষ্কার কার্যকর আছে।’
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ছাড়া কোনো কাউন্সিল হতে পারে না-এটা গঠনতন্ত্রে রয়েছে। একটি কাউন্সিল তথাকথিভাবে করা হয়, এটা বৈধ কাউন্সিল হতে পারে না। এগুলো বিব্রতকর। জিএম কাদের ছাড়া অন্য কারো লাঙ্গল পাওয়ার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রে অন্য কারো চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই।’