বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ কোনো সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।
রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে তিনি সংস্কারসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সমর্থন জানান। দেশে-বিদেশে সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ-নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের জনগণ কোনো সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান কিংবা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অনিশ্চয়তায় রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা কার্যকর ও টেকসই হয় না। ‘
‘হাজারো শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক বৈধতার সংকট নেই। তবে এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। সরকার যেহেতু জবাবদিহিমূলক নয়, সেহেতু নৈতিক কারণেই সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার। সংস্কারের বিকল্প নেই, আবার অল্প বা বেশি সংস্কার বলেও কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। ‘
‘নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সরকারের চরিত্র যাই হোক, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। এ কারণেই হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে হলেও অবশ্যই নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে। ‘
‘আমি মনে করি রাষ্ট্রে স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদ রুখে দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের নিয়ে সংসদ সরকার গঠিত হলে অবশ্যই সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকার সব দায়িত্ব পালন করবে, জনগণ হয়তো এমনটি আশা করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের হয়তো সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেট পাশের ঠিক আগ মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করেই এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যে একটি অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছে, এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য কিন্তু খুব ভালো বিষয় নয়।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয় নয়। দেশের স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার না থাকায়, একদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অপরদিকে এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এক রকমের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় যেকোনো ধরনের অজুহাত কিংবা গড়িমসির সুযোগ নিয়ে পতিত পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। ‘
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক দলগুলো আবারো জাতীয় নির্বাচনের তারিখ-দিন সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। নির্বাচনের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ আমরা যারা একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছি, আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।’
‘সুতরাং দেশে-বিদেশে সম্মানিত দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ-নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে, এই প্রত্যাশা রাখছি।’