গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে মাঠে আছে সেনাবাহিনী। তাদের মোতায়েন এখন ১০ মাস অতিক্রম করেছে। সামরিক আইন বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা ছাড়া এটা সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বেশি সময়ের মোতায়েন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেনা মোতায়েন এখন থেকে আরও সাত থেকে আট মাস অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচন-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক স্থানান্তর নিশ্চিত করতে নির্বাচনের পরও কয়েক সপ্তাহ মোতায়েন থাকতে পারে সেনাবাহিনী।
২০২৪ সালের ২৩ জুন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল সেনাপ্রধানের পঞ্চম ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’, যা অনুষ্ঠিত হয় বুধবার।
এই বৈঠকে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নির্বাচিত সরকার গঠনের পর সেনাবাহিনীর ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘ সময় সেনা মোতায়েন জাতীয় প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারে’, তবে বর্তমান অস্থিতিশীলতা বিবেচনায় ‘দ্রুত প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।’
সেনাবাহিনীর এরকম অবস্থান তিনি প্রথম ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত তার দ্বিতীয় ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ প্রকাশ করেন। সরকার পতনের কিছুদিন পর ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একইদিন অনুষ্ঠিত হয় তার সময়ের একমাত্র ‘দরবার’ যেখানে সেনাবাহিনীর সকল সদস্য অংশ নেন।
ওইসব বৈঠকে জেনারেল ওয়াকার জানান, বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক প্রশাসনের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা দীর্ঘ সময়ের জন্য দরকার হতে পারে। তিনি তখনই বলেছিলেন, ‘দ্রুত প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ দেখছি না।’
চলতি বছরের ২৪ মার্চের ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ও জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা দ্রুত নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান এবং ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট জেনারেল ওয়াকারের প্রথম ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করবে না। ওয়াকারের ওই সিদ্ধান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হন।
আর ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি তার তৃতীয় ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ তিনি শৃঙ্খলা, নিরপেক্ষতা ও জনবিশ্বাস বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন এবং নির্বাচন ঘিরে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রতিটি ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ ও একমাত্র ‘দরবারে’ তার মূল বার্তা ছিল গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া এবং ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন।
ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে আন্দোলন বিস্তার লাভ করে। কারফিউ জারি করেও বিক্ষোভ ঠেকানো যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ১,৪০০ জন নিহত হন।
কিন্তু ৩ আগস্টের ‘অফিসার্স অ্যাড্রেসে’ সেনাবাহিনী গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানানোর পর শেখ হাসিনা ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন।
শেখ হাসিনার বিদায়ে নতুন সরকার গঠনের পর সেনাবাহিনীকে চারবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—১৭ সেপ্টেম্বর, ১৬ নভেম্বর ২০২৪; ১২ জানুয়ারি ও ১৪ মে ২০২৫। প্রতিবার ৬০ দিনের জন্য।
এ সময়ে সেনাপ্রধান বারবার সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং নির্বাচনকাজে সততা ও পেশাদারিত্বের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবারের ভাষণও এর ব্যতিক্রম ছিল না।