বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ক্লাব বসুন্ধরা কিংস আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। একদিকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে খেলোয়াড় ছাড়তে অনীহা, অন্যদিকে সাবেক কোচ ও ট্রেইনারের বকেয়া টাকার অভিযোগ নিয়ে এবার ফিফার তদন্তের মুখে পড়েছে বিপিএল জায়ান্টরা।
ক্লাবটির সাবেক রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরিও তিতা এবং ফরাসি ফিটনেস ট্রেইনার খলিল চাকরৌন দাবি করেছেন, বসুন্ধরা কিংস তাদের তিন মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। এমনকি বিমানভাড়াও নিজের পকেট থেকে দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিতা। সেই প্রমাণ হাতে নিয়ে তারা ফিফায় অভিযোগ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোচ কিংবা খেলোয়াড় যদি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য অর্থ না পান, তাহলে ফিফার কাছে লিখিত অভিযোগ করার সুযোগ থাকে। তিতারা সেই পথেই এগিয়েছেন।
এখন তদন্ত করছে ফিফা। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে সংস্থাটি। কিংসকে এরই মধ্যে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে নিজেদের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য। সাবেক কোচ তিতা বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথমআলোকে জানিয়েছেন, ‘অভিযোগটি এখন তদন্ত পর্যায়ে। আমার আইনজীবী জানিয়েছেন, ফিফা আমাদের মামলার বিষয়টি নিয়ে ক্লাবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তারা কিংসকে ২৭ আগস্টের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে।’
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে ক্লাবকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর শাস্তি দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা (ট্রান্সফার ব্যান), লিগে পয়েন্ট কেটে নেওয়া কিংবা লিগ থেকে অবনমন। অন্যদিকে, যদি কিংস প্রয়োজনীয় প্রমাণ হাজির করতে পারে এবং অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে মামলা খারিজ হয়ে যাবে।
মাঠের বাইরে এই জটিলতা চলার পাশাপাশি জাতীয় দল নিয়েও ক্লাবটির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে। আগামী ৬ ও ৯ সেপ্টেম্বর নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা আগেভাগেই ক্যাম্প শুরু করেছেন। কিন্তু কিংস এখনো ছাড়পত্র দেয়নি তাদের দশজন ফুটবলারের। ফলে মাত্র ১৪ জন নিয়ে প্রস্তুতি চালাতে হচ্ছে জাতীয় দলের কোচকে।
এমন অবস্থায় ফেডারেশনের জরুরি সভা হলেও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান সেখানে যোগ দেননি। ফলে আলোচনায় কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। ফেডারেশন কেবল ক্লাবকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত সমাধান হবে এবং ফুটবলাররা ক্যাম্পে যোগ দেবেন। তবে আগের অভিজ্ঞতা বলছে, কিংস একাধিকবার বয়সভিত্তিক দল কিংবা অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে গড়িমসি করেছে।
অতএব, জাতীয় দলের প্রস্তুতি হোঁচট খাচ্ছে আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্লাবটির ভাবমূর্তিও চাপে পড়ছে। একদিকে সাবেক কোচ ও ট্রেইনারের বকেয়া টাকার মামলা, অন্যদিকে জাতীয় স্বার্থে খেলোয়াড় ছাড়তে অনীহা, সব মিলিয়ে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব বসুন্ধরা কিংস এখন কঠিন সমালোচনার মুখে।