চলতি বছরের আগস্ট মাসে সারাদেশে অন্তত ৭২ সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাটিও রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) পর্যবেক্ষণে এই সংখ্যা উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস জানিয়েছে, আগের মাসের তুলনায় আগস্টে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে।
জুলাইয়ে কমপক্ষে ২৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে সে মাসের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল। সেসময় আহত হন ১৫ জন, হুমকি পেয়েছিলেন পাঁচজন ও লাঞ্ছিত হয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া দু্টি মামলায় দুজন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়।
এর বিপরীতে আগস্টে ৩৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৭২ সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে এক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন পাঁচজন, হুমকি পেয়েছেন ১১ জন এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন। এছাড়া একটি মামলায় দুই সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে, চাকরিচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৯ সাংবাদিক।
আগস্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক ছিল জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, এই মাসজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন, মব কিলিং, সাংবাদিক নিপীড়ন এবং সীমান্ত হত্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
এইচআরএসএসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আগস্ট মাসে কমপক্ষে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় চার জন নিহত ও ৫১৪ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার বেশিরভাগই বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে শুরু।
মব সহিংসতা ও গণপিটুনিতে ২৫ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে এক কিশোরসহ একাধিক ব্যক্তি চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ধানমণ্ডি ৩২ এবং ডিআরইউ-তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মব তৈরি করে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তে ভারতের বিএসএফের গুলিতে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, একই সময়ে ৪২৭ জনকে পুশইন করা হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির হাতে ৪৪ জন জেলে অপহরণ ও মাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্রও আগস্টে ভয়াবহ ছিল বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, আগস্টে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৪ নারী ও শিশু, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশির বয়স ১৮ বছরের নিচে। পারিবারিক সহিংসতা ও যৌতুকের কারণে অনেক নারী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও এমাসে কমপক্ষে ১৫৯ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
কারাগার ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, শ্রমিক নির্যাতন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস সরকারের প্রতি মানবাধিকার সুরক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং সকল নাগরিক ও সংগঠনকে আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।