বেনজীরের নামে রেড নোটিশের দাবি পুলিশের, ইন্টারপোলের সাইটে নেই

admin
By admin
4 Min Read
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Highlights
  • এআইজি এনামুল হক সাগর বলেন, 'ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে অধিকাংশ রেড নোটিশ নিয়ন্ত্রিত, যা শুধু আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দেখতে পারে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে বেনজীর আহমেদের নামও সেখানে দেখা যাবে।'

বাংলাদেশের সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের নামে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান হয়নি এ নোটিশ।

বহুল আলোচিত বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।  তিনি বিদেশে পলাতক হলেও তার অবস্থান সম্পর্কে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সাংবাদিকদের জানান, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গত ১০ এপ্রিল রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল।

তবে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় বেনজীরের ছবি বা নাম দেখা না যাওয়ায় এর সত্যতা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

বিষয়টি জানতে চাইলে এআইজি এনামুল হক সাগর বলেন, ‘ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে অধিকাংশ রেড নোটিশ নিয়ন্ত্রিত, যা শুধু আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দেখতে পারে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে বেনজীর আহমেদের নামও সেখানে দেখা যাবে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত ১০ এপ্রিল সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়।’

রেড নোটিশ দৃশ্যমান না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইন্টারপোলের সঙ্গে ই-মেইল আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে নিশ্চিত করা হয়েছে।  ইন্টারপোল জানিয়েছে,  বেনজীরের অবস্থান শনাক্ত করার পর তার বিরুদ্ধে জারি করা রেড নোটিশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।’

বেনজীরের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি সপরিবারে পলাতক। কোন দেশে আছেন, তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।’

‘তবে রেড নোটিশ যেহেতু জারি হয়েছে, খুব শিগগিরই তার অবস্থান জানা যাবে, আর গ্রেপ্তারের পর সহসাই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে,’ আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। তিনি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। এছাড়া তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

গোপালগঞ্জের সন্তান বেনজীর ছিলেন পুলিশ বিভাগের আলোচিত কর্মকর্তা। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার মধ্যে বেনজীর আহমেদের নাম ছিল। অথচ এর কিছুদিন পরে তিনি বিনা বাধায় সফর করেন যুক্তরাষ্ট্র।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তবে তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই  গত বছরের ৪ মে সপরিবার দেশ ছাড়েন তিনি। সেই থেকে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন বেনজীর।

এ বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

তাদের মধ্যে বেনজীরের বিরুদ্ধে করা আবেদনে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অন্যদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বাংলাদেশের পলাতক কয়েক অপরাধীর বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়া হলেও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির নজির নেই।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *