ফুটপাতে বেপরোয়া বাইক, পথচারীরা রাস্তায়

অনিক রহমান
3 Min Read
পথচারীর নিরাপদে হাঁটাচলার ফুটপাতে নিত্য বাগড়া দিচ্ছে মোটর বাইক। ছবি: শামীম উস সালেহীন/টাইমস

কোটি দুয়েক মানুষের ব্যস্ত মেগাসিটি ঢাকার পথচারীর ফুটপাতের অনেকটা আগেই কেড়ে নিয়েছেন হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর এখন ফুটপাতে নিত্য উৎপাতের নাম বেপরোয়া মোটরসাইকেল। ফুটপাতে নিরাপদে হাঁটাচলার বাকি পথটুকুতেও দিনরাত বাগড়া দিচ্ছেন বাইকাররা।

যানজট এড়াতে রাস্তার পরিবর্তে ফুটপাতকেই চলাচলের পথ করে নিয়েছেন অনেক বাইক চালক। আবার এমনও দেখা গেছে, ট্রাফিক আইন ভেঙে ফুটপাতে দখলে উৎসাহ দিচ্ছেন ‘রাইড শেয়ারিং মোটো অ্যাপের’ আরোহীরাও।

নগরীর ধানমন্ডি, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, মিরপুর রোড, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট ও মতিঝিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এই চিত্র। এতে দুর্ঘটনা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাতে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

মোটরসাইকেলের যন্ত্রণায় অনেক ফুটপাত ব্যবহারকারী বাধ্য হয়ে চলছেন ব্যস্ত রাস্তাতেই। এতেও বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ক্ষুব্ধ পথচারীরা বলছেন, যানজট এড়াতে প্রায়ই মোটরসাইকেল চালকরা সরাসরি উঠে যান ফুটপাতে। সিগন্যালের কিছু সময় বাঁচাতে এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে এভাবে নিয়মিত ট্রাফিক আইন অমান্য করলেও কেউ যেন দেখার নেই!

পথচারীর নিরাপদে হাঁটাচলার ফুটপাতে নিত্য বাগড়া দিচ্ছে মোটর বাইক। ছবি: শামীম উস সালেহীন/টাইমস

ফার্মগেট এলাকায় প্রতিদিন যাতায়াত করা পোশাকশ্রমিক আনোয়ারা হোসেন বলেন, ‘ধরুন, আপনি ব্যস্ত ফুটপাতে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ একটা মোটরসাইকেল গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। প্রতিবাদ করলে উল্টো গালাগালি শুনতে হয়, চুপ থাকলেও ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক সময় রাস্তায় নেমে হেঁটে যাই।’

‘আবার বেশিরভাগ সময় রাস্তায়ও গাড়ির চাপ থাকে। সেই সঙ্গে থাকে মোটরসাইকেল। তাহলে আমরা হাঁটব কোথায়,’ প্রশ্ন তার।

ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে পথচারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন করার পাশাপাশি চালকরা নিজের জীবন নিয়েও খেলা করছেন। আইন অনুযায়ী হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। তবে অনেকেই তা ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ আবার হেলমেট হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে রাখেন। যারা রাইড শেয়ারিং এ যাত্রী বহন করেন তাদেরও হেলমেট থাকে না।

বেপরোয়া চালকদের ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে দাবি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘হেলমেটবিহীন চালকদের জরিমানা করা হয়। গুরুতর আইন লঙ্ঘন হলে মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। তবুও অনেক চালক ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলাচল করেন।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেনের মতে, শুধুমাত্র বড় কোনো দুর্ঘটনা হলে বা মিডিয়ায় চাপ তৈরি হলে পুলিশ কয়েকদিন অভিযান চালায়।

‘এরপর আবার আগের সব বিশৃঙ্খলা চলে আগের মতোই,’ যোগ করেন তিনি।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সমস্যা শুধু বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের কারণে হচ্ছে, এমন নয়; বরং এটি সার্বিক ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার ফল। ঢাকার অধিকাংশ ফুটপাতই সরু, ভাঙাচোরা বা হকারদের দখলে। এরফলেও হাঁটাচলার জন্য অনেকে রাস্তায় নামতে বাধ্য হন। আর এই সুযোগে মোটরসাইকেল উঠে পড়ে সেই ফুটপাতে।

 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *