জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম না বাড়লেও হুট করেই বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বাস মালিক সমিতি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে জেলা বাস মালিক সমিতি ও জেলা প্রশাকের কাছে আবেদন করেন বাস মালিকেরা। সেই আবেদনের ওপর গত বুধবার জেলা প্রশাসকরে কার্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৫০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘বাসভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকার নতুন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। এখন সিন্ডিকেট নেই, কাউকে চাঁদা দিতে হয়না। আট নয় মাস আগে যে ভাড়া নির্ধারন হলো সেই ভাড়া হঠাৎ এই ভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বাসভাড়া বৃদ্ধির জন্য খুবই তৎপর দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত ২০- ২৫ বছরের খতিয়ান যদি দেখি- বাসভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে আগের সব জেলা প্রশাসক ভূমিকা রেখেছে।ন অথচ জাহিদুল ইসলাম মিয়া মালিক যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করেই সমিতির আবেদন আমলে নিয়েছেন। তড়িঘড়ি করে সভা ডেকে বাসমালিকদের পক্ষ নিয়ে বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাহিদুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ জুন বাসভাড়া বৃদ্ধির জন্য বাস মালিকরা আবেদন করে। এতে সাড়া না দেওয়ায় তারা গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেয়। মালিক সমিতি জনপ্রতি ৬১ টাকা ভাড়া দাবি করে জানায়, ৫০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানায়।’
‘গত বুধবার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি সভা ডেকে সব স্টেক হোল্ডাদের উপস্থিতিতে বিআরটিএ’র হিসেব অনুযায়ী ৫৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।’
জেলা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা দুরত্ব ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার। সরকারি হিসাবে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ৩১ পয়সা হিসাবে প্রায় ২০ কিলোমিটারের ভাড়া আসে ৪৬ দশমিক ২ টাকা। আর ফ্লাইওভারে টোল পাঁচ টাকা। এই রুটের বাসগুলো ৫২ সিটের। কিন্ত বাস মালিকেরা যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ৫২ সিটকে ৪৫ সিটে রূপান্তর করেছে। কাজেই ৫২ সিটের ভাড়া ওই ৪৫ জনকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
বিআরটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন, উৎসব, মৌমিতা, বোরাক, আনন্দ পরিবহনসহ দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে।
বাস মালিক সমিতির এক সদস্য জানান, প্রতিদিন এই রুটে একটি বাস চারটি ‘সিঙ্গেল ট্রিপ’ বা একক যাত্রা করতে পারে। অর্থাৎ দিনে আটবার আসা-যাওয়া করে। একটি বাস প্রতি ট্রিপে কমপক্ষে ৪৫ জন যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
সে হিসাবে, জনপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ টাকা করে ভাড়া আদায় করলে দিনে ১ হাজার ৮শ টাকা অতিরিক্ত উপার্জন হয়। মাস শেষে অতিরিক্ত ভাড়া দাঁড়ায় কমপক্ষে ৫৪ হাজার টাকা।
২০০ গাড়ির হিসেব করলে মাসে অতিরিক্ত এক কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা হচ্ছে মালিক সমিতির পকেটে।
যাত্রী ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের বাস মালিক সমিতি ‘পরিবহন মাফিয়া চক্রে’ রূপান্তরিত হয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব হয়েছেন অনেকে।