৫৩ বছরে আমরা এমন সুযোগ আর পাইনি: আলী রীয়াজ

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
বক্তব্য রাখছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। ফাইল ছবি: বায়েজীদ আকতার/টাইমস

রাজনৈতিক দলগুলোকে মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐক্যমতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের’ (এনসিসি) ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘গত ৫৩ বছরে আমরা এমন সুযোগ আর পাইনি। এ সুযোগ এসেছে অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে। এটিকে নষ্ট করা যাবে না।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভার শুরুতে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের বৈঠক চলছে।

শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনার পর সেটি আবার আলোচনায় উঠানো হচ্ছে না। কারণ, আমরা দলীয়ভাবে আলোচনার সুযোগ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, সাফল্য নিয়ে দিনটি শেষ করা।’

তিনি বলেন, ‘কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা এই পর্যন্ত এসেছি সেটি যেন প্রেরণা হয়ে কাজ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।আমরা একমত হতে পারলে সেটা ইতিবাচক হবে।’

রাষ্ট্র গঠনে যে সুযোগ এসেছে তা হেলায় হারানো যাবে না জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘৫৩ বছরে এমন আলোচনার সুযোগ আসেনি। মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ২০টির মধ্যে আজকে তিনটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ’

এদিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ এবং জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত আসবে। এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি সেগুলো আবারও আলোচনার সুযোগ রাখবে কমিশন। চলতি মাসেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায় তারা।

এ সময় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

ঐকমত্য কমিশন সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য তৈরির লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় ২০টি সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯টি বিষয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।

এর মধ্যে দুটি বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্য এবং কয়েকটি বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে এখনো কোনো প্রস্তাব আলোচনার টেবিল থেকে বাদ পড়েনি।

যেসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি নিয়োগ, ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নির্ধারণ এবং সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি স্পষ্টীকরণ।

এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের একটি বিকল্প প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে।

৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এবং বিরোধী দলকে আসনের অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এছাড়া একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন- এমন প্রস্তাবেও দলগুলো মোটামুটি একমত, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

এদিকে নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার নিয়ম, স্থানীয় সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি এবং জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *