দেশে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু-সংবেদনশীল জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর এক-তৃতীয়াংশই এখন বরগুনা জেলায়। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মে ও জুন মাসে বরগুনায় ২ হাজার ৮৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, অপরিকল্পিত পানি সংরক্ষণ এবং অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে, যার ফলে বরগুনা হয়ে উঠেছে দেশের ডেঙ্গু সংকটের কেন্দ্রবিন্দু। স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সহায়তা দিতে ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি বরগুনায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী, আমতলী এবং তালতলী উপজেলায় ব্র্যাকের প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, উৎসস্থলে মশা ধ্বংস করছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছেন।
১৭ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৫১০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২ হাজার ১৪১টি সক্রিয় প্রজননস্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস করা হয়েছে।
ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. শায়লা ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অনেক রোগের ধরন আর ঋতু বদলে গেছে। এটি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।’
অনিয়মিত বৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অপরিকল্পিত পানি সংরক্ষণ—এসবই এডিস মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। শুধু মশা নিয়ন্ত্রণ নয়, ভবিষ্যতের জলবায়ু-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য আমরা স্থানীয়দের সচেতন করছি, যোগ করেন তিনি।
একই সঙ্গে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সন্ধ্যার সময় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে ডেঙ্গুর উপসর্গ, প্রতিরোধ পদ্ধতি ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির, স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোয় প্রতিরোধ বার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে স্থানীয় স্কুলগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব কার্যক্রম জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, বরগুনা পৌরসভা, রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
মসজিদের উঠান, স্কুল প্রাঙ্গণ ও বাজার এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং লার্ভিসাইড প্রয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৫৫ জন আক্রান্তের মধ্যে ২ হাজার ৭০১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তাই আমরা আশাবাদী। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত না থাকলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বড় ধরনের চাপে পড়বে।’