‘লাল চিনির’ জিআই স্বীকৃতিতে কৃষকের উচ্ছ্বাস

টাইমস ন্যাশনাল
4 Min Read
লাল চিনি তৈরি করছেন একজন কৃষক। ছবি: টাইমস
Highlights
  • ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের হাজারো কৃষক উৎপাদন করেন আখের লাল চিনি।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় উৎপাদিত ‘লাল চিনি’ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রায় আড়াইশ বছর ধরে আখের রস থেকে হাতে তৈরি মিহি দানার ঐতিহ্যবাহী এই চিনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাইয়ের কৃষকরা অনেক খুশি।

তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় কৃষকরা এই লাল চিনি উৎপাদনে আরো বেশি আগ্রহী হবেন। উৎপাদন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়লে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। অর্গানিক পণ্য হিসেবে এই লাল চিনি বাইরে রপ্তানি করলে কৃষকদের আয় এবং উন্নতির রাস্তা প্রশস্ত হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জানান, ফুলবাড়িয়ার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের হাজারো কৃষক উৎপাদন করেন আখের লাল চিনি। প্রতিবছর প্রায় একশো কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয়। এ বছর উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আখ থেকে প্রায় আট মেট্রিক টন লাল চিনি হয়। এ বছর প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছরের ১১ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল চিনির জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। অন্য কোনো পক্ষের দাবি না থাকায় সব প্রক্রিয়া শেষে পণ্যটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়। জিআই সনদের জন্য এ বছর ২৬ আগস্ট সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় লোকজন ও কৃষকরা জানায়, লাল চিনি উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। প্রথমে আখ কেটে ইঞ্জিনচালিত মেশিনে মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর ড্রামে করে রস নিয়ে চুল্লিতে বড় লোহার কড়াইয়ে জ্বাল দিতে হয়। কাঁচা রস ঘণ্টাখানেক জ্বাল দেওয়ার পর তা ঘন হয়ে এলে কড়াই নামিয়ে কাঠের তৈরি ডাং (হাতল) দিয়ে গরম রসে দ্রুত ঘর্ষণ চালাতে থাকলে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে তা জমতে থাকে। সাধারণত ডিঙ্গি (বড় ট্রেতে) এবং ডাং বা দুপ (হাতে) পদ্ধতিতে এই চিনি তৈরি করা হয় এবং দ্রুত ঘর্ষণের ফলে একপর্যায়ে বালুকণার মতো হয়ে সেই রস লাল চিনিতে রূপ নেয়। প্রতি মণ গড়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয় লাল চিনি।

কালাদহর কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘২০০ বছরের বেশি সময় ধরে আখের রস থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বংশানুক্রমিকভাবে হাতে লাল চিনি তৈরি করছেন এই উপজেলার কৃষকরা। আমাদের বাপ-দাদারা আখ চাষ করে লাল চিনি উৎপাদন করতেন। এখন আমি ও আমার উত্তরাধিকারীরা আখ থেকে চিনি উৎপাদন করি। এই চিনিতে কোনো ভেজাল নেই।’

কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকের জন্য এই চিনি একটি নগদ অর্থকরী ফসল। বাড়িতেই কয়েক ধাপে এটি তৈরি করা হয়। বর্তমানে লাল চিনির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই, পলাশতলী, বিদ্যানন্দ, কৈয়ৈরচালা, বাকতা, কুশমাইল, কালাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, সন্তোষপুর ও চৌধারসহ বিভিন্ন গ্রামে এই পণ্য উৎপাদিত হয়।

বাকতার কৃষক জয়নাল বলেন, ‘বেশিভাগ কৃষক দেশি জাতের আখ চাষ করে। ভালো জাতের আখ সবাই চাষ করলে ফলন আরো ভালো হতো। আমরা যদি লাভবান হই, তাহলে আমরা আরো বেশি চাষাবাদ করতে উৎসাহ পাব।’

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. নাসরিন আক্তার বানু জানান, ইতোমধ্যে কিছু কৃষককে প্রদর্শনী প্লটের আওতায় আনা হয়েছে এবং তাদের উন্নতমানের আখের জাত ও উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশে একমাত্র ফুলবাড়িয়াতেই লাল চিনি উৎপাদিত হয় এবং এটি শিল্পে পরিণত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনায় লাল চিনি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *