রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাতারকে সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান ইউনূসের

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
Highlights
  • 'বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ, মানবপাচার এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা বাড়ছে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।'

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট একটি বৈশ্বিক মানবিক দুর্যোগ। এই পরিস্থিতির টেকসই সমাধানে কাতার তার কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ফেরানো এবং প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।’

গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘কাতার চাইলে এই সংকট সমাধানে নেতৃত্ব দিতে পারে। এই আলোচনা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং বাস্তবভিত্তিক সমাধান ও কার্যকর পদক্ষেপের সূচনা হওয়া উচিত।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ, মানবপাচার এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা বাড়ছে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ছড়িয়ে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট কিছুটা উপেক্ষিত হচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ যে ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে, তার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৮ জনকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে সংকটের স্থায়ী সমাধান একমাত্র টেকসই প্রত্যাবাসনেই নিহিত।’

রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে থাকা অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতেও জোর দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত মিশনের চলমান কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরবে না।

তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করবে বাংলাদেশ, যেখানে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গাম্বিয়ার নেতৃত্বে ওআইসি এ পর্যন্ত ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ—৭ লাখ ডলার।

ইউনূস বলেন, ‘এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *