বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান বাংলাদেশে অবস্থানকালে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (ভিআইপি) নিরাপত্তা’ পাবেন। আইন-শৃংখলা বাহিনীর এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। দলের পক্ষ থেকে ডা. জোবাইদা রহমান বাংলাদেশে অবস্থানকালে তার ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ‘বাড়তি নিরাপত্তা’র পাশাপাশি দেশে অবস্থানকালে তারেকপত্নী ডা. জোবাইদার ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা’ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
সোমবার ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়ার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে চার মাস পর বিএনপি চেয়ারপারসর খালেদা জিয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি। বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান এবং দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।
ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোবাইদা রহমান অনেকদিন লন্ডনে আছেন। সেখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিঃসন্দেহেই অনেক ভাল। তবে দেশে ফেরার পর তিনি যেন ন্যূনতম নিরাপত্তাহীনতা বোধ না করেন, সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করা হয়েছে।’
তিনি জানান, রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত নীতি-নির্ধারণী কমিটির সভা থেকে খালেদা জিয়া ও জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে ‘দিকনির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে। সেই দিকনির্দেশনার আলোকেই পুলিশ প্রস্তুতি নিয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এসএন নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের পত্নী ডা. জোবাইদা রহমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের ‘যে ধরনের নিরাপত্তা’ দেওয়া প্রয়োজন, সে ধরনের নিরাপত্তাই তারা পাবেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের জন্য যে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা সেটি প্রকাশ করব না। নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গোপনীয় (কনফিডেন্সিয়াল)।’
গত ৩০ এপ্রিল বিএনপির পক্ষ থেকে আইজিপিকে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশে অবস্থানকালে তারেকপত্নীর ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের আবেদন করা হয়। এতে ডা. জোবাইদার যে চার স্তরের নিরাপত্তার জন্য আবেদন করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে– গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেক্টশন, বাসায় পুলিশ পাহারা এবং বাসায় আর্চওয়ে স্থাপন করা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা ভাবনা এবং আমাদের নিরাপত্তা ভাবনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চাওয়ার চেয়ে কম, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চাওয়ার চেয়ে ”বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা” নেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের হিসেব-নিকেশ (অ্যাসেসমেন্ট) অনুযায়ী ”সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা” নিচ্ছি।’
জোবাইদা রহমানের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরশাদের সরকার আমলে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জোবাইদা রহমানের চাচা। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০০৮ সালে তারেক রহমানে সঙ্গে তিনি লন্ডন চলে যান।
গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এবারো তিনি ফিরছেন সেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই।