বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের দলবদল বাজারের সময় শেষ হয়েছে ১৪ আগস্ট রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। শেষ সময় পর্যন্ত ক্লাবগুলোর মধ্যে খেলোয়াড় অদলবদলের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। কাগজেকলমে নতুন মৌসুমে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ও শক্তিশালী দল গড়েছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী এবং বর্তমান শক্তির প্রতীক বসুন্ধরা কিংস। বিপরীতে, গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান সাংগঠনিক দুর্বলতায় এবার প্রত্যাশিত মানের দল সাজাতে পারেনি।
মোহামেডানের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ তিন বিদেশি খেলোয়াড়ের দলত্যাগ। অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে এখন আবাহনীর জার্সিতে, আর এমানুয়েল সানডে ও টনি পাড়ি জমিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসে। এই দলবদলে আবাহনী-কিংস নিজেদের স্কোয়াডে নতুন মাত্রা যোগ করলেও, মোহামেডান হারিয়েছে গত মৌসুমের সাফল্যের বড় ভরসা। কিংসের প্রতিভাবান মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন এবার খেলবেন আবাহনীর হয়ে এবং একইসাথে পুলিশ এফসি থেকে উদীয়মান স্ট্রাইকার আল-আমিনকেও দলে ভিড়িয়েছে তারা, আর ডান প্রান্তে গতি ও শক্তির মিশেলে খেলা রাইট ব্যাক তাজ উদ্দিনকে দলে ভিড়িয়েছে কিংস।
জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আগের মতোই খেলবেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। তবে ব্রাদার্স এবার চমক দেখিয়েছে বাফুফের নতুন নিয়মের সহায়তায়। বাফুফের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সার্কভুক্ত দেশের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশি হিসেবে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন এবারের আসর থেকে। ক্লাবটি সই করিয়েছে চারজন নেপালি তারকাকে, তারা হলেন অঞ্জন বিস্তা, যোগেশ গুরুং, আরিক বিস্তা এবং সানিশ শ্রেষ্ঠা। এর ফলে এবারের লিগে মোট আটজন নেপালি খেলোয়াড় মাঠে নামবেন, যা বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগে আগে দেখা যায়নি। লীগের বড় দলগুলো যদিও সার্কের খেলোয়াড় নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিলনা, তবে ছোট বাজেটের ক্লাবগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।
দলবদলের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবকে ঘিরে অনিশ্চয়তা। ফিফার নিষেধাজ্ঞায় আটকে থাকা এই ক্লাব উজবেক ফুটবলারের বকেয়া পরিশোধ করে শাস্তি কাটিয়েছে এবং সময়মতো দলবদল সম্পন্ন করেছে।
এছাড়া অনূর্ধ্ব-২৩ দলের প্রবাসী ফুটবলার ক্যাসপার হককে নিয়ে শোনা যাচ্ছিল মোহামেডানের আগ্রহের গুঞ্জন। তবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ইভেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার এসএমএ কাহার সিদ্দিকি বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দিলেন। তার ভাষায়, ‘ক্যাসপারের সঙ্গে মোহামেডানের কথা চলেইনি। যারা মোহামেডানের ভাল চায় না তারা এ সমস্ত গুজব ছড়িয়ে থাকে। মোহামেডান কখনোই বড় নাম দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে না। আমরা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় নিয়েই লড়াই করি। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে সেই ক্ষুধা আছে, যা দিয়ে তারা দলের জন্য সবকিছু দিতে প্রস্তুত থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভক্তরা যেভাবে পাশে থাকে, তাতে কাগজে-কলমে শক্তিশালী না হলেও আমরা ফল আনতে পারি। ঢাকা আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংস শক্তিশালী দল গড়েছে, কিন্তু আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবি। শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব।’
নতুন মৌসুমে শক্তির ভারসাম্য কিছুটা বড় দলের দিকে ঝুঁকে থাকলেও, দলবদলের গল্প বলছে মধ্যম সারির ক্লাবগুলোও চুপচাপ বসে নেই। সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত এবং খেলোয়াড়দের দৃঢ় মনোবল, সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগে এবারও জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছে।