রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান সাধন হত্যাকাণ্ডে পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন পাঁচ থেকে ছয় সন্দেহভাজন। খুনের আগমূহুর্তে একটি ফোনকল পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা সাধনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার জানিয়েছেন। তবে ওই কলটি কে করেছিলেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলো তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি।

বাড্ডা এলাকায় কেবল টিভি ও ইন্টারনেট ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে সাধনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাধন বাড্ডার রবিন–ডালিম–মাহবুব গ্রুপের মাহবুবের মামা। তাকে গুলি করেছে বাড্ডার আরেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মেহেদী গ্রুপের অনুসারীরা। তারা বৃহস্পতিবারও তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।
গত ২১ মার্চ গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামে এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তিনি ছিলেন মেহদে গ্রুপের অনুসারী। তাকে হত্যা করেছিল রবিন, ডালিম ও মাহবুব গ্রুপের লোকেরা। ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুমন হত্যার প্রতিশোধ নিতেও সাধনকে হত্যা করা হতে পারে।

নিহতের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় জানিয়েছেন, এলোপাতাড়ি গুলিতে সাধন ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে, বুকের নিচের অংশে ও পেটে জখমপ্রাপ্ত হয়। প্রথমে অটোরিকশায় মহাখালী বক্ষব্যধী হাসপাতাল ও সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়।
ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের কথা জানিয়ে পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার এইচএম শফিকুর রহমান বলেন, ‘শ্যুটার দুইজন প্রথমে গলির যে প্রান্তে নিহত সাধন বসেছিলেন সে প্রান্ত থেকে হেঁটে লেকের দিকে যান। গলির আরেকপাশে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, এরপর লোকজনের ভিড় একটু কমলে হেঁটে গিয়ে কাছ থেকে গুলি করে হেঁটে চলে যায়।’
তিনি জানান, ‘হত্যাকারীদের’ গতিবিধি লক্ষ্য করতে যতদূর পর্যন্ত অন্যান্য সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে, ততদূর পর্যন্ত তাদেরকে স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে চলে যেতে দেখা গেছে। তবে পুরোটা সময়ই তারা দুইজনই মাস্ক পরে থাকায় চেহারা বোঝা যায়নি।
ফোনকল পেয়ে সাধনের বাসা থেকে বের হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ফোনকলের বিষয়টিসহ সবকিছুই খতিয়ে দেখব।’
পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িত দুইজনের শারিরীক আকার ও গঠন অনুযায়ী আমরা ৫-৬ জনের একটি তালিকা করেছি। তবে এ পর্যন্ত সিডিআর রেকর্ড অনুযায়ী সন্দেহভাজনদের “লোকেশন” ঘটনাস্থলের আশেপাশে পাওয়া যায়নি।’
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুদারাঘাট ৪ নম্বর গলিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপি নেতা সাধন গুলিতে নিহত হন। সে সময় তিনি স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে আরও চার-পাঁচজনের বসেছিলেন।
ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুজন হেঁটে এসে সাধনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পুরো হত্যাকাণ্ডে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ড। মাস্ক পরা সন্ত্রাসীরা সাধনকে কয়েক রাউন্ড গুলিতে হত্যার পর আরও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে হেঁটেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। কেউ তাদের বাধা দেওয়ার সুযোগ পাননি।