বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে কালিমা দিলেন কঙ্গনা

admin
By admin
4 Min Read
ভারতীয় "ইমার্জেন্সি" মুভির পোস্টার। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম যখন মোহাম্মদ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে, তখন ভারতীয় একটি চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা তার আজীবনের অর্জন, বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করে।

এই সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর এমন কিছু বক্তব্য দেখানো হয়েছে যার সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর কোনো প্রকৃত ভাষণের সামান্য মিলও নেই। বরং কল্পিত সংলাপ বসিয়ে তাঁকে ভারত ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে “বাংলাদেশের মা” হিসেবে প্রশংসা করতে দেখা যায়, এমনকি তাঁকে “মা ইন্দিরা” বলে স্লোগান দিতেও দেখানো হয়েছে।

এই বিকৃত ও মিথ্যা সংলাপ শুরু হয় জীবনীভিত্তিক ড্রামা ফিল্ম “ইমার্জেন্সি”র ৪৬তম মিনিটের পর যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিতে দেখা যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি জেনারেল এ এ কে নিয়াজির আত্মসমর্পণের দৃশ্য দেখানোর পরপরই ওই ভাষণচিত্র ভেসে উঠে।

ভারতীয় “ইমার্জেন্সি” মুভিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফাইল ছবি

সেখানে মুজিব চরিত্রটি বলছেন: “আমাদের মাতৃভূমি বাংলা আমার সঙ্গে কথা বলছে…”
তখন ভিড় থেকে এক শিশু কন্যা তাকে প্রশ্ন করে: “সে কী বলছে, বাবা?”
উত্তরে মুজিব বলেন: “সে বলছে, কখনো তোমার মাকে ভুলে যেও না।”

শিশুটি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে: “কিন্তু আমার মা তো যুদ্ধে মারা গেছে!”
মুজিব চরিত্রটি আবেগভরা কণ্ঠে তখন বলেন: “তোমার মা মারা যায়নি। আমাদের কোনো বাঙালি মাকে হারায়নি…”
এরপর এই সিনেমায় বঙ্গবন্ধুকে এমন একটি সংলাপ বলতে শোনা যায় যা সম্পূর্ণরূপে ইতিহাসের বিকৃতি। তিনি বলেন, “আমাদের মাতৃভূমি ভারত আমাদের বাংলাকে জন্ম দিয়েছে।”

এরপর তিনি নদীর দিকে ঘুরে বলেন: “আসুন শপথ করি … যতদিন ব্রহ্মপুত্রের স্রোত বইবে, যতদিন আমরা বাংলায় কথা বলব… আমরা আমাদের মা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।”
তারপর মুজিব চরিত্রটি আবার বলেন: “আমরা ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা এত উচ্চস্বরে করব যে দিল্লি পর্যন্ত তা শোনা যাবে।”

তখন তিনি “মা ইন্দিরার জন্য জয়ধ্বনি” স্লোগান ধরেন, সবাই তার সঙ্গে গলা মেলায়, স্লোগানটি চলতে চলতে দেখা যায় নয়াদিল্লিতে এরকম হাজারো মানুষের কণ্ঠেও “মা ইন্দিরার জন্য জয়ধ্বনি” স্লোগান।

সমালোচকরা বলছেন, এই সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর এমন নাটকীয় বিকৃত উপস্থাপন আসলে তাঁর দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের সামিল।
তবে তারা উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা নতুন কিছু নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইমরান হোসেন বলেন: ভারতীয় চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে আসছে। এই চলচ্চিত্রে (ইমার্জেন্সি) যেভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটাও সেই বিকৃত প্রচেষ্টারই অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানানো।”

ড. ইমরানের মতে, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্পের একটি সুপরিকল্পিত প্রচারণার অংশ। টাইমস অব বাংলোদেশকে তিনি বলেন, “এটি বাংলাদেশের জনগণের সাহস, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে খাটো করেছে।”

“ইমার্জেন্সি” ২০২৫ সালের একটি ভারতীয় হিন্দি ভাষার ঐতিহাসিক জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র যা কঙ্গনা রানাউতের পরিচালনায় ও প্রযোজনায় নির্মিত।
রীতেশ শাহের চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করে কঙ্গনা রানাউত নিজেই সিনেমার কাহিনি লিখেছেন।

এই সিনেমাটি মূলত ১৯৭৫ সালের ভারতীয় জরুরি অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কঙ্গনা রানাউত ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিশি কৌশিক।
চলচ্চিত্রটি ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি মুক্তি পায় এবং বর্তমানে নেটফ্লিক্সে স্ট্রিমিং হচ্ছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *