ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মুহূর্তেই নদীর পানির প্রবল ঢল গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়ে, পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ফুলগাজী, পরশুরাম ও সদর উপজেলার ১৩৩ জন বাসিন্দা স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়ার পানি হঠাৎ করে বেড়ে যায়। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেছেন, ‘মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ছয়টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে দুটি ও পরশুরামে চারটি।’ তবে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, ফুলগাজী ও পরশুরামে মোট ১১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, তার উপজেলায় নদীগুলোর সাতটি স্থানে ভাঙনের খবর মিলেছে।
ফুলগাজীর ইউএনও ফারিয়া ইসলাম বলেন, চারটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। দুর্গতদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে এবং শুকনা খাবার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পরশুরামের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধর, পশ্চিম অলকা, জঙ্গলঘোনা, গদানগর, উত্তর মনিপুর, মেলাঘরসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজীর পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া, সাতকুচিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম অলকা, উত্তর ও মধ্যম ধনীকুন্ডা ও মণিপুরের ১০টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
পরশুরামের পশ্চিম অলকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, ‘সিলোনিয়া নদীর পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে সন্ধ্যার পর আমাদের ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পড়ে। আমরা আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছি।’
উত্তর মণিপুরের আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ‘আমাদের এলাকায় প্রায় ৬০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে দোতলায় আশ্রয় নিয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সন্ধ্যায় জরুরি সভা হয়েছে। ফুলগাজীতে ৯৯টি ও পরশুরামে ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ফুলগাজীতে ৩৬টি পরিবারের ৮৫ জন, পরশুরামে ৫টি পরিবারের ২০ জন এবং সদর উপজেলায় ৭টি পরিবারের ২৮ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা এ বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। বুধবারসহ আগামী দুই দিনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’