কংগ্রেসের শশী থারুর, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এবং এআইএমআইএমের আসাদুদ্দিন ওয়াইসিসহ ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা পাহেলগামে ভয়াবহ হামলার ঘটনার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। এই হামলার কারণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) শঙ্কর রায়চৌধুরীও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ভারতের গোয়েন্দা ব্যবস্থার ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল রায়চৌধুরী বলেন, “পাহেলগাম হত্যাকাণ্ড আমাদের সামরিক গোয়েন্দা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্পষ্টতই এখানে মানব গোয়েন্দা ব্যর্থতা ঘটেছে— তা না হলে সন্ত্রাসীরা পাহেলগাম পর্যন্ত পৌঁছে এই হামলা কীভাবে করল?”
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ হলেও কার্যকর মানব গোয়েন্দা তৎপরতাই আগাম সতর্কতার মূল ভিত্তি।
সম্প্রতি ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে সরকারও পরোক্ষভাবে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে, তবে সরকার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা বিশেষজ্ঞদের মতে পর্যাপ্ত নয়।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, পাহেলগামের ঘটনা গোয়েন্দা ব্যবস্থার গভীর ও পদ্ধতিগত দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এর কারণ কি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর ভারতের গোয়েন্দা অগ্রাধিকারে পরিবর্তন? নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সে প্রশ্ন রেখেছেন।
তারা এটাও বলছেন যে এর কারণ কি ইউনূস সরকারের পশ্চিমা শক্তিগুলোর দিকে ঝোঁক এবং নয়াদিল্লি থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা? যে কারণে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এর বাংলাদেশকেন্দ্রিক তৎপরতা বেড়েছে।
এছাড়াও, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিরতা বৃদ্ধি, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং মালদ্বীপের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ‘র’-এর মনোযোগ অতিমাত্রায় বিস্তৃত হয়েছে। ফলে, ভারতের অভ্যন্তরীণ হুমকি পর্যবেক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
‘র’ এখন দেশের বাইরে রাজনৈতিক মিশনে অত্যধিক ব্যস্ত,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন: অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষতি হলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তা হুমকি তৈরি করবে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো, যেখানে ‘র’ (বহিঃশত্রু ও ভূরাজনীতি), ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও চরমপন্থা), এনআইএ (সন্ত্রাস তদন্ত), ডিআইএ (সামরিক গোয়েন্দা), এনটিআরও (ইলেকট্রনিক ও সাইবার গোয়েন্দা) এবং এনএসসিএস (নীতিগত সমন্বয়) কাজ করে যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে হুমকি প্রতিরোধের জন্য তাজ করে।
বাস্তবে, আন্তঃসংস্থা যোগাযোগের অভাব, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং কৌশলগত সমন্বয়হীনতার কারণে এই কাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পাহেলগামের হামলা ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বেঙ্গালুরুর হাই গ্রাউন্ডস থানায় বিজেপি আইটি সেলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যেখানে রাহুল গান্ধীর বিদেশ সফরের সঙ্গে সন্ত্রাসী হামলার সংযোগ দেখিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছিল বিজেপি।
কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (কেপিসিসি) এই অভিযোগ দায়ের করে বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরানোর অভিযোগ এনেছে।
রাজনৈতিক দোষারোপের এই খেলায় বড় প্রশ্ন উঠেছে— ভারত কি আরেকটি বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকটের আগেই গোয়েন্দা অগ্রাধিকার পুনর্গঠন করতে পারবে?
ইতোমধ্যে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, পাহেলগামের মতো স্পর্শকাতর স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা হামলার জন্য প্ররোচনার মতো কাজ করেছে কিনা। তারা প্রশ্ন রেখেছেন যে এটি আসলেই ব্যর্থতা নাকি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উটপাখির মতো চোখ বন্ধ করে রেখেছিল?
ভারত সরকার অবশ্য এ ধরনের অভিযোগকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” বলে নাকচ করেছে। তবে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, “বাস্তব কারণে” পাহেলগামে কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং পরবর্তী পর্যটন মৌসুমের জন্য নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু তার আগেই হামলা যাতে নিহত ২৬ জন।