সেনাবাহিনীর পাঁচ কর্মকর্তা তদন্তের মুখোমুখি। তাদের বিরুদ্ধে ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’ চলমান। সেই সুবাদে গত ৫ এপ্রিল থেকে তাদের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কার্যত বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্র জানিয়েছে।
গতবছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবর্ষনের নির্দেশ দেয়াসহ ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ায় মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম জাকারিয়া হোসাইন, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ, কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল মুহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম এবং মেজর নোমান আল ফারুক।
তদন্ত ও বিচারের বিষয় জানতে টাইমস অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সূত্র জানায়, নানা প্রক্রিয়া শেষে পাঁচ উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোর্ট অব এনকোয়ারি শুরু হয়েছে। গত সাত মাসে তাদের বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন তথ্য যাচাই করা হয়েছে। দুজন কর্মকর্তা অন্য বাহিনীতে কর্মরত থাকায় সেখানেও পৃথক তদন্ত হয়েছে। সকলকে মাতৃবাহিনীতে ফেরত আনার পর সেনাবাহিনী পৃথকভাবে কোর্ট অব এনকোয়ারি শুরু করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন ঘটনার সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপারেশনস) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষনের নির্দেশদাতা হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করেছেন অনেকে।
জুলাই মাসের শেষ দিকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লক রেইড দিয়ে আন্দোলনরতদের আটক করা হচ্ছিল। রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সেনাবাহিনীর টিম গুলিবর্ষন করছে বলে অভিযোগ আসছিল। সে সময় এসব এলাকার ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার্স ব্রিগেড এবং ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের সৈনিকরা বেপরোয়া আচরণ করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। ব্রিগেড দুটির নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম জাকারিয়া হোসাইন ও ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। এক সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইমরান হামিদ।
একই সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সেনবাহিনীর যে টিম দায়িত্ব পালন করছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন ২৩ ইস্ট বেঙ্গলের উপ অধিনায়ক মেজর নোমান আল ফারুক। এখানে সাধারণ নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষন করার কিছু ফুটেজ ভাইরাল হলে সেনাবাহিনী বিতর্কের মুখে পড়ে।

লে. কর্নেল মুহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মরত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে তাকে আর্ম পার্সোনাল ভেহিকেলের পাশে অবস্থান নিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে কোর্ট অব এনকোয়ারি সাধারণ একটি বিষয়। এটি প্রাথমিক তদন্তের মতো। অহরহ এরকম হয়ে থাকে। খুব সাধারণ বিষয় নিয়ে কোর্ট অব এনকোয়ারি হতে পারে, আবার সিরিয়াস বিষয় নিয়েও হতে পারে।’
‘অনেক কোর্ট অব এনকোয়ারি হয়, যেগুলো তথ্য প্রমাণের অভাবে সেখানেই শেষ হয়ে যায়। যার কারণে চুড়ান্ত তদন্ত আর বিচার সম্পন্ন হয়ার আগে বাহিনী থেকে বিষয়গুলো প্রচার করা হয় না। আর যদি প্রাথমিক তদন্তে গুরুতর কিছু বেরিয়ে আসে তখন বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয় স্তরে যাওয়া হয়। দ্বিতীয় স্তরে আরো তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হয়। এরপর সে বিষয়টিকে সামরিক আদালতে বিচারের জন্য নেয়া হয়। অর্থাৎ কোর্ট মার্শাল করা হয়।’