ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারতের গজলডোবা বাঁধের থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার রেশে বাড়ছে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এর আগে বুধবার একই পয়েন্টে একই সময়ে পানি বইছিল বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে তিস্তা অববাহিকা এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।’
তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারী, লালমনিরহাট,রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
পাউবোর একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সকালে ভারতের জলপাইগুড়ির গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে দফায় দফায় পানি ছাড়া হয়েছে। সেদিন সকাল ৮টায় ১ হাজার ৫৪৬ কিউসেক ও বিকেলে ১ হাজার ৭২৯ দশমিক ৪০ কিউসেক পানি ছাড়া হয়। ভারতীয় অংশের তিস্তা অববাহিকার সীমান্তবর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ কালিগঞ্জ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার অসুরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা এবং সুরক্ষিত এলাকায় হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে।
গজলডোবা থেকে পানি ছাড়া হলে তা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সময় লাগে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা।
এই পানির পাশাপাশি উজানে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে গেছে। ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। নদীবেষ্টিত চর ও চরের গ্রামগুলোয় হাঁটু সমান পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অনেকে গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু স্থানে সরে যাচ্ছেন।
পূর্ব ছাতনাই ঝাঁড়সিংহেশ্বর চরের কৃষক এনতাজুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। রাত থেকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছি। ক্রমেই বাড়ছে পানি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।’
পানির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে মাচার ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষদের। এসব এলাকার বাসিন্দারা শিশু-বৃদ্ধ আর গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপদে রয়েছেন। এ ছাড়া এলাকায় শুকনা খাদ্য বিতরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বানের পানিতে তলিয়ে থাকায় পরিবারগুলো রান্না করে খেতে পারছে না।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তিস্তা অববাহিকার সবচেয়ে বড় চর গ্রাম ঝাড়সিংশ্বর। চর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়াবহ হচ্ছে৷’
টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিনও জানালেন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা।