বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিলেটের আকাশে মেঘের আনাগোনা। বেলা গড়াতে হালকা রোদের দেখা মিললেও দক্ষিণ আকাশ ফুঁড়ে নেমে আসা বেরসিক বৃষ্টিতে তাও মিইয়ে গেল। ফ্রিজবি দিয়ে ডাচ দলের গা গরমের অনুশীলনের পর ক্যাচিং আর থ্রো অনুশীলন মিনিট দশেকের বেশি চলেনি বৃষ্টির ছাঁটে।
সংবাদ সম্মেলনে নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস বলে গেছেন, সিরিজ জয়ের কথা। তার দলের অনুশীলনেও থাকল চনমনে ভাবটা। এদিকে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অনুশীলন। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন দাস বলে গেলেন, ভালো ক্রিকেট খেলার কথা। যার সারমর্ম দাঁড়ায় অনেকটা ডিফেন্সিভ ব্যাটিং করার মতো।
দুপুর বেলা ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস সিরিজ জয়ের আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। প্রতিটা সিরিজ সবাই জেতার জন্যই খেলে। আশা করছি আমরা এখানে ভালো ক্রিকেট খেলব। যদি যথেষ্ট ভালো খেলতে পারি, তাহলে সিরিজ জেতার একটা সুযোগ আছে। আমার মনে হয় স্কোয়াডে আত্মবিশ্বাসটাও বাড়ছে সবার মধ্যে। বিশ্বকাপ আর কোয়ালিফায়ারে আমরা অনেক হাই-প্রেশার ম্যাচ খেলেছি। আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বলছে, নিজেদের দিনে আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি।’
এদিকে এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে আছে ডাচদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটাই। সাধারণত বড় টুর্নামেন্টের তুলনামূলক ছোট দলের কাছে হারলে সমালোচনার একটা শংকা থাকে, ‘গেল গেল’ রবও ওঠে দর্শক-সমর্থকদের কন্ঠে। তবে লিটন অবশ্য ছোট দল হিসেবে কাউকে দেখতে নারাজ।
ধেয়ে আসা বাউন্সারে ডাক করা কিংবা অফ স্টাম্পে রাইজিং ডেলিভারিতে ব্লক করার মতো ডিফেন্সিভ শট খেলেই যেন সেই প্রসঙ্গে উত্তর দিলেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথমত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন কোনো দল নেই যে ছোট। আমরা সবসময় খেলি জেতার জন্য এবং ভবিষ্যতেও যতগুলো গেম খেলব সব জেতার জন্যই যাব।’
হারের ঝুঁকি থাকলেও লিটন সামনে আনলেন অতীতের ফলাফল আর বাস্তবতাকে। পরাজয়ের ঝুঁকি তাকে ভাবাচ্ছে না একদমই, আবার নিজেদেরও ফেভারিট হিসেবে সরাসরি বলছেন না। কে জানে! হয়তো বাড়তি চাপ এড়ানোর জন্যই হয়তো লিটনের এই স্ট্র্যাটেজি। এ নিয়ে লিটনের ব্যাখা, ‘ঝুঁকি না জিনিসটা। বাংলাদেশ এর আগেও অনেক টিমের কাছে হেরেছে, নতুন কোনো কিছু না। যদি হেরেও যাই, হেরে যেতেই পারি। দুইটা দলই খেলতে এসেছে, একটা টিম জিতবে, একটা টিম হারবে। বাট আমরা কতটা ক্রিকেট ভালো খেলতে পারতেছি, এটা হচ্ছে বিষয়।’
লিটন সরাসরি নিজেদের ফেভারিট না মানলেও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কতটা প্রবল প্রতিপক্ষ, সেটা ভালোভাবেই জানেন স্কট। এই উইকেটকিপার ব্যাটার বলে গেছেন, ‘নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশ অনেক ভালো দল। বিশেষ করে তাদের ঘরের মাঠে। আমরা জানি এই দলের কী কোয়ালিটি আছে। সেটা টপকে যেতে, ম্যাচ জিততে আমাদের ভালো ক্রিকেটটাই খেলতে হবে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো না হলেও সিলেটের মাঠে বেশ সুখস্মৃতি আছে নেদারল্যান্ডসের। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯০ রান চেজ করে ফেলেছি মাত্র ১৩.৫ ওভারে। ৩ বল হাতে রেখে পাওয়া সেই জয়ে নিশ্চিত করেছিল সুপার টেন। ডাচ ক্রিকেটের রূপকথায় জায়গা করে নেয়া সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার খুব বেশি কিছু না থাকলেও, সিলেটের মাঠ আশা দেখাচ্ছে স্কট এডওয়ার্ডসদের।
এদিকে টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটিংয়ের ঘাটতি ঘুচাতেও কিছুটা আশার আলো বাংলাদেশকে দেখাচ্ছেন জুলিয়ান উড। ফিটনেস, স্কিল ক্যাম্পের সাথে লিটনদের চলেছে পাওয়ার হিটিং সেশনও। বাকি সবার মতো ক্রিকেটাররাও অপেক্ষায় আছেন, পাওয়ার হিটিংটা কতটা রপ্ত করতে পারলেন সেটা দেখার জন্য। অবশ্য রাতারাতি সব বদলে যাবে এই আশাও করছেন না লিটন। তার অপেক্ষা ম্যাচ খেলার।
পাওয়ার হিটিংয়ের সেশনগুলো নিয়ে লিটন বলেন, ‘দেখেন, কেউ আসলে তো দুই-তিন দিনে ফুল চেঞ্জ করে দিতে পারবে না, বাট তার কিছু থট প্রসেস ছিল প্র্যাকটিসের, যেগুলো নতুন মনে হয়েছে আমাদের কাছে। আমরা কাজ করেছি। দেখা যাক, এখনো তো ম্যাচ খেলিনি সে আসার পরে। আমাদের একটা ম্যাচও হয়নি। নেদারল্যান্ডসে সিরিজ দিয়েই দেখা যাবে যে বাংলাদেশ টিম এখান থেকে কতখানি ডেভেলপ করেছে।’
আগামী ৩০ আগস্ট প্রথম টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ। ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ।