গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে সংঘর্ষের চেষ্টা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে শহরের পৌর পার্কে একদল দুর্বৃত্ত এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলে এবং চারদিক থেকে তাদের গাড়ি ও পুলিশ যানবাহন আটকে দেয়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প পথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গোপালগঞ্জ সদরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সবশেষ চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এই হামলা করেছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত দেখেছি।’
এর আগে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে দুই-তিনশ লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় মঞ্চের কাছাকাছি অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সরে গিয়ে আদালত চত্বরে সরে পড়েন।
ঘটনার পর গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এর আগে এনসিপি সমাবেশস্থলে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ হামলার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে সমাবেশে উপস্থিত থাকা এনসিপির নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগ মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করে।

গোপালগঞ্জ এখনো বাংলাদেশের নয়: হাসনাত
‘গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের হয়ে উঠতে পারেনি’—এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘প্রিয় গোপালগঞ্জবাসী, আপনারা বাংলাদেশের হয়ে উঠুন!’
বুধবার দুপুরে জেলা পৌরপার্কে এনসিপির সমাবেশ এ কথা বলেন তিনি।
এ জনসভা শুরুর কিছুক্ষণ আগেই একদল দুর্বৃত্ত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে এনসিপির সভাস্থলে হামলা চালিয়ে বেশকিছু প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙচুর করে।
এছাড়া বুধবার রাতে টহল পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ইউএনও’র গাড়ির বহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
এনসিপির জনসভায় গোপালগঞ্জবাসীর উদ্দেশে হাসনাত তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি আপনাদের ভালবাসতেন, তাহলে ভারতে না গিয়ে গোপালগঞ্জেই আসতেন।’

তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্বার্থপর’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি শুধু তার পরিবারের কথাই ভেবেছেন। আর আওয়ামী লীগ পরিকল্পিভাবে গোপালগঞ্জকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।’
হাসনাত আরো বলেন, ‘জালিমের শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছি, ইনশাল্লাহ, এবার আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ করবো।’
এ সময় তিনি ‘মুজিববাদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কী তোর বাপ-দাদার’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, কেন্দ্রীয় নেতা সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে পদযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে এনসিপি। দলের এ কর্মসূচি ঘিরে রাতে পুলিশের গাড়িতে আগুনের ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গোপালগঞ্জ সদরে।
সকালে গোপালগঞ্জ শহর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। দোকানপাট তেমন একটা খোলেনি।
জুলাই পদযাত্রা শেষে গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে এনসিপির সমাবেশ সকাল ১০টায় হওয়ার কথা থাকলেও জনসভা বিলম্বিত হয়।

পুলিশের গাড়িতে আগুন
এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদরে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আগুন দেওয়ার সময় তারা ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেয়।
এ প্রসঙ্গে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান জানান, এনসিপি’র মাসজুড়ে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কে পদযাত্রায় বুধবার কেন্দ্রীয় নেতাদের আসার কথা রয়েছে। তাদের পদযাত্রা বানচাল করতে সদর উপজেলার উলপুর এলাকায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশের দু’জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন– কনস্টেবল কাওসার হোসেন ও মিনহাজ সরকার। তাদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও’র গাড়িবহরে হামলা
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরে হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান।
সদর থানা পুলিশ জানিয়েছে, এনসিপি’র পদযাত্রা বানচালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর এলাকায় ইউএনওর গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।