পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে ভাড়া করা অফিসে চলছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম ‘নিষিদ্ধ’ হওয়ার পর দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ৫ আগস্টের পর ভারতে আশ্রয় নেন। সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লিতে থাকলেও শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের বহু নেতা রয়েছেন কলকাতায়।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া নেতারা প্রথমে ভাড়া ফ্ল্যাট বা হোটেল কক্ষে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালেও সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন স্থায়ী কার্যালয়। প্রতিদিনই সেখানে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। পরিচয় গোপন রাখতে অফিসে সাইনবোর্ড, শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার ছবি নেই। এখান থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।
বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, কলকাতার লাগোয়া উপনগরীর ওই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে কয়েক মাস ধরে যাতায়াত করছেন নতুন কিছু মুখ– যাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ, মন্ত্রী ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। প্রথম দিকে বৈঠক হতো বাসাবাড়ি বা ভাড়া করা রেস্তোরাঁয়, পরে প্রয়োজন মেটাতে ভাড়া নেওয়া হয় আটতলার একটি ফ্ল্যাট। সেখানে ৩০-৩৫ জনের বৈঠক হয়, বড় সমাবেশের জন্য ভাড়া নেওয়া হয় রেস্তোরাঁ বা হল। কলকাতা ও আশপাশে বর্তমানে প্রায় শ’ খানেক সাবেক সাংসদ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মী বসবাস করছেন।
পার্টি অফিসের নির্দিষ্ট সময় নেই, প্রয়োজনে নেতারা আসেন। ভারতীয় গোয়েন্দারা বিষয়টি জানেন বলেই ধারণা করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম সম্ভব নয়।
দল পরিচালিত হচ্ছে মূলত ভারত থেকেই। শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি থাকেন, শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ কলকাতায়। ৩১ জুলাই দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে, বাকি কার্যক্রম চলছে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
দেশে কর্মীরা হামলা-মামলার মুখে, আর নেতৃত্ব বিদেশে কেন– এ প্রশ্নে সাবেক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথের ব্যাখ্যা, দেশে থাকলে কারাগার বা মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল। বিদেশ থেকে সংগঠন পুনর্গঠন ও সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনায় মনোযোগী– বিশেষ করে অর্থনীতি ও বিচারব্যবস্থায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের দাবি, এক বছরে সরকারের জনপ্রিয়তা হারিয়ে গেছে, মানুষ শেখ হাসিনার সময়কে ভালো বলছে।
ভারতে থাকা নেতাদের জীবনযাত্রায় এসেছে পরিবর্তন। কেউ গণপরিবহনে চলছেন, কেউ সহকর্মীর মোটরসাইকেলে, কেউবা ট্যাক্সি ভাড়া ভাগাভাগি করছেন। পঙ্কজ দেবনাথের ভাষায়, সঞ্চিত অর্থে মিতব্যয়ী হয়ে চলছেন তারা, খরচের জোগান দিচ্ছেন দেশে–বিদেশে থাকা সমর্থকরা। কতদিন থাকবেন—এ প্রশ্নে ওবায়েদুল কাদেরের জবাব, রাজনৈতিক লড়াইয়ের সময় আগে থেকে ঠিক হয় না, তবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।