১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি পুনরায় উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের বণ্টন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য প্রেরিত আন্তর্জাতিক ত্রাণের হিসাব চূড়ান্ত করার মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের মাধ্যমে নতুনভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র দপ্তরের পরামর্শ (এফওসি) বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এটি ছিল গত ১৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সচিব পর্যায়ের আলোচনা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মনে করি—এখনই সময় ইতিহাসের দায় মেটানোর এবং সম্পর্ককে টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার।’
তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বকেয়া সম্পদ এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ২০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল চেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী বলে জানিয়েছে।’
বৈঠকে অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, প্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানে পণ্যের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, শুল্ক জটিলতা নিরসন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে।
জসিম উদ্দিন জানান, ‘দুই দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফ্লাই জিন্নাহকে অনুমোদন দিয়েছে এবং এয়ার সিয়াল অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। এছাড়া সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং জনসাধারণ পর্যায়ের যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে।’
দুই দেশ শিক্ষাবিদ, লেখক, সংগীতজ্ঞ ও খেলোয়াড়দের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষই গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানায় এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহায়তা চায়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সার্ক পুনরুজ্জীবনের ওপর বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি, সংযোগ ও উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ওআইসি-এর লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।’
এই আলোচনা প্রমাণ করে—দুই দেশ যদি অতীতের জটিলতা মীমাংসা করতে সক্ষম হয়, তবে ভবিষ্যতে একটি পরস্পর সহযোগিতামূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব।