ইরানে মার্কিন হামলা: ন্যাটো সম্মেলন ঘিরে বিক্ষোভ

4 Min Read
ন্যাটো সম্মেলনের আগে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বিরোধী শত শত জনতার বিক্ষোভ। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

ইরানে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটো সম্মেলনের আগে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। রোববারের এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীরা একই সঙ্গে  ন্যাটোর সামরিক খরচ বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত—বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার—প্রতিবাদ জানান।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়, তখনই এই বিক্ষোভ ঘটে। এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান মিত্র ইসরায়েলের পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইরানি নাগরিক হোসেইন হামাদানি বলেন, ‘মানুষ শান্তিতে বাঁচতে চায়। পরিস্থিতি ভালো নয়, তাহলে কেন যুদ্ধের পেছনে অর্থ ব্যয় করবো?’

ন্যাটোর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা  রয়টার্সকে জানান, তারা বর্তমান পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া ন্যাটো সম্মেলনে ৩২টি সদস্য দেশের নেতারা অংশ নেবেন। সেখানে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি, বিশেষ করে জাতীয় জিডিপির ৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোরালোভাবে সমর্থন করছেন।

তবে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক ও প্রতিকূল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ব্যয়ের জন্য একটি নমনীয় পন্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প পাল্টা বলেন, ‘স্পেন প্রতিরক্ষায় চিরকালই কম খরচ করে।’

রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই ন্যাটো দেশগুলো সামরিক খরচ বাড়াচ্ছে, যদিও এখনো প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

ন্যাটো সম্মেলনের আগে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বিরোধী শত শত জনতার বিক্ষোভ। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

এর আগে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইরানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা ‘সফলভাবে সম্পন্ন’ হয়েছে।

সমাজ মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল এক্স আইডি থেকে ট্রাম্পের পোস্টটি শেয়ার করা হয়।

ট্রাম্প জানান, ইরানের ফোরদো, নাতান্জ এবং এসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে।

তিনি লেখেন, ‘আমরা আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা শেষ করেছি। ফোরদো ছিল মূল টার্গেট, যেখানে পুরোপুরি বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। সব বিমান এখন ইরানি আকাশসীমার বাইরে এবং নিরাপদে দেশে ফিরছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের “মহান মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন”। এমন অভিযান পৃথিবীর আর কোনো সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে পারতো না। এখন শান্তির সময়।’

ইরান এই হামলাকে সরাসরি ‘আগ্রাসন’ বলে উল্লেখ করে তা ‘প্রতিহত’ করার ঘোষণা দিয়েছে। তেহরানে যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভে হাজারো মানুষ অংশ নিয়েছেন।

এদিকে ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এছাড়া হামলার পর তিনি “শান্তির সময়” বললেও, মধ্যপ্রাচ্যে এই পদক্ষেপের পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

ওয়াশিনটন থেকে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, রোববার ভোরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জানান, ‘ইরানের প্রধান পরমাণু স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ‘যদি ইরান পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে “শান্তি না হয় বিপর্যয়।”

ইরানের পরমাণু সংস্থা স্বীকার করেছে যে, ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা হয়েছে। তবে তারা জানিয়েছে, এসব হামলায় তাদের পরমাণু কার্যক্রম থেমে যাবে না।

ইসরায়েল এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইরানে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে আসছে, যার লক্ষ্য ছিল দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করা এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করা। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন স্টেলথ বোমারু বিমান ও ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বিশেষ বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করে গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংসে সহযোগিতা করেছে।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *