আমাদের লক্ষ্য সব ম্যাচ জেতা: মোরসালিন

টাইমস স্পোর্টস
6 Min Read
প্রেস কনফারেন্সে মোরসালিন। ছবি: বাফুফে

অনূর্ধ্ব ২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব সামনে। ভিয়েতনাম সফরে যাওয়ার আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা আর লক্ষ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ২৩ দলের প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু, টিম ম্যানেজার শাহিন হাসান এবং অধিনায়ক শেখ মোরসালিন। এর ঠিক আগেই ১৮ ও ২২ আগস্ট বাহরাইনে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে দল। সফর নিয়ে টিটুর সরল মূল্যায়ন, ‘বাহরাইন সফরটা আমাদের জন্য ভালো ছিল। আরও কয়েকটা ম্যাচ পেলে লাভ হতো, তবে যেটুকু সুযোগ পেয়েছি সেটি কাজে লাগাতে পেরেছি। সেখানে গিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’

দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ফাহামিদুলকে প্রথম ম্যাচে পাওয়া যাচ্ছে না। কোচ বললেন, ‘ফাহামিদুলকে ভিয়েতনাম ম্যাচে পাওয়া যাবে না। সে ১ সেপ্টেম্বর সকালে সরাসরি ভিয়েতনামে আসবে। তবে দলের সঙ্গে অনুশীলন ছাড়া তাকে প্রথম একাদশে নামানো হবে না, এটা নিশ্চিত। ও যোগ দিলে আমাদের শক্তি অবশ্যই বাড়বে।’

এই দলেই আছেন জাতীয় দলের বর্তমান সাত ফুটবলার। সমন্বয় কীভাবে হবে, প্রশ্নে টিটুর জবাব, ‘সবটাই নির্ভর করছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে। একজন খেলোয়াড় কত দ্রুত আমাদের খেলার ধরন বুঝে নিতে পারে সেটাই মুখ্য। কিউবা যদি কোনো স্থানীয় খেলোয়াড় জাতীয় দলের কারও চেয়ে ভালো পারফর্ম করে, তাহলে তাকেই খেলানো হবে।’

জাতীয় দলের হেড কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার সম্পৃক্ততা নিয়ে টিটু কোনো অস্বস্তি দেখলেন না, বরং এটাকে শক্তি হিসেবে দেখছেন। ‘দলের কৃতিত্ব কে নিলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল লক্ষ্য হলো বাছাইয়ে এগোনো। খেলোয়াড়রা ভালো খেললে কৃতিত্ব তাদেরই প্রাপ্য। জাতীয় দলের কোচের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগলে সেটি দলের জন্যই ইতিবাচক।’

লক্ষ্য নিয়ে টিটুর স্বর আত্মবিশ্বাসী, ‘আমাদের কোয়ালিফাই করার বাস্তবসম্মত সুযোগ আছে। প্রথম ম্যাচেই ভিয়েতনামকে হারিয়ে শুরু করতে চাই। এক মাস ধরে আমরা এই দল নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত এমন কিছু হয়নি যেটা নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা।’

প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণও চলছে পরিকল্পনা মেনে। টিটু বললেন, ‘বাহরাইনের বিপক্ষে খেলে যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, সেটা কাজে লাগাতে চাই। বাহরাইন শক্তিশালী, তারপরও আমরা লড়েছি। এবার প্রতিপক্ষ ভিয়েতনাম, ইয়েমেন ও সিঙ্গাপুর, তিন দলকেই আলাদা করে বিশ্লেষণ করেছি। ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা সাজাবো। প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্সই পরের ম্যাচের কৌশল ঠিক করবে।’

অনূর্ধ্ব-২৩ কম্পিটিশনে অতীত রেকর্ড ভালো না হলেও দল সেটা নিয়ে ভাবতে চায় না। কোচের ভাষায়, ‘আগে ভালো করতে পারিনি, সেটা মাথায় ধরে রাখতে চাই না। আমরা অতীত ভুলে বর্তমান দল নিয়ে এগোতে চাই। এবার নতুনভাবে শুরু করাই লক্ষ্য।’

দলের ম্যানেজার শাহিন হাসান ক্যাম্পের ভেতরের উন্নতির দিকগুলো তুলে ধরলেন। ‘প্রথম আর দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচের পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। দ্বিতীয় ম্যাচে পারফরম্যান্স, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবই উন্নত হয়েছে। বাহরাইন ক্যাম্পে দলীয় সমন্বয় ভালো ছিল। জায়ান, তানিল শালিক সবাই স্থানীয়দের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। ফাহামিদুল আগে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ক্লাব পরিবর্তন নিয়ে ওর কিছু জটিলতা ছিল। তাই প্রথম ম্যাচে তাকে পাচ্ছি না’ বললেন তিনি।

শুধু মাঠে নয়, সফরের বাইরের শৃঙ্খলাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে দল। শাহিন হাসান জানালেন, ‘আমরা দেখেছি বিদেশ সফরে অনেক সময় খেলোয়াড়রা খেলার বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত হয়, তাতে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। তাই সবাইকে অনুরোধ করেছি ম্যাচ চলাকালীন যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় না থাকে। ৩, ৬ ও ৯ সেপ্টেম্বরের ম্যাচগুলোকে সামনে রেখে সবার মনোযোগ এক জায়গায় রাখতে বলেছি।’

অধিনায়ক শেখ মোরসালিন দলের ভিত গাঁথতে চান শৃঙ্খলাকে ভিত্তি করে, ‘আমি বিশ্বাস করি শৃঙ্খলার জায়গায় আমি শতভাগ ঠিক আছি। চেষ্টা করব সবাইকে একসঙ্গে ধরে রাখতে।’ প্রবাসী খেলোয়াড়রা দলের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিচ্ছে প্রসঙ্গে মোরসালিন বলেন ‘কিউবা, জায়ান, তানিল শালিক ভালো খেলছে, স্থানীয়রাও ভালো করছে। এবং জাতীয় দলে আগে খেলা ১১-১২ জন রয়েছে তাদের জাতীয় দলের যে অভিজ্ঞতা আছে সেটি এখানে কাজে দেবে বলে মনে করি।’

নারী দলের সাম্প্রতিক সফলতা পুরুষ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের উপর আলাদা চাপ সৃষ্টি করছে না বরং মনোবল চাঙ্গা করেছে বলে জানালেন মোরসালিন, ‘নারী দল পরপর দুটি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে। এটা আমাদের অনুপ্রেরণা। এখানে চাপ নেই। আমাদের লক্ষ্য সব ম্যাচ জেতা।’

সব মিলিয়ে ভিয়েতনাম মিশনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল আত্মবিশ্বাসী। বাহরাইন সফরের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আর অনুশীলনে গড়ে ওঠা বোঝাপড়া নিয়ে লাল সবুজের তরুণরা এখন মাঠের অপেক্ষায়। এবার লক্ষ্য স্পষ্ট, প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু, তারপর ধাপে ধাপে এগোনো।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল

ক্রমিক নং নাম অবস্থান
মো: মেহেদী হাসান সাব্বির গোলরক্ষক
সাকিব আল হাসান গোলরক্ষক
মো: জাহিদ হাসান শান্ত ডিফেন্ডার
মো: আসিফ গোলরক্ষক
মো: শাকিল আহাদ তপু ডিফেন্ডার
কমকাই মারমা আক্য ডিফেন্ডার
মো: রিমন হোসেন ডিফেন্ডার
মো: সাব্বির হোসেন ডিফেন্ডার
জায়ান আহমেদ ডিফেন্ডার
১০ মো: মিঠু চৌধুরী ডিফেন্ডার
১১ মো: মজিবুর রহমান জনি মিডফিল্ডার
১২ শেখ মোরসালিন মিডফিল্ডার
১৩ তানিল শালিক মিডফিল্ডার
১৪ সাজেদ হাসান জাম্মন নিঝুম মিডফিল্ডার
১৫ মোহসিন আহমেদ মিডফিল্ডার
১৬ কিউবা রাউল মিচেল মিডফিল্ডার
১৭ ফাহামিদুল ইসলাম মিডফিল্ডার
১৮ আরমান ফয়সাল আকাশ ফরওয়ার্ড
১৯ রাজু আহমেদ জিসান ফরওয়ার্ড
২০ মিরাজুল ইসলাম ফরওয়ার্ড
২১ মো: রাব্বি হোসেন রাহুল ফরওয়ার্ড
২২ মো: পিয়াশ আহমেদ নোভা ফরওয়ার্ড
২৩ আল আমিন ফরওয়ার্ড
Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *